সামাজিক রক্ষণশীলতার কারণে বাংলাদেশে নারী বা পুরুষ যে কেউই প্রকাশ্যে স্তনবিষয়ক কোনো আলোচনা করতে অস্বস্তি বোধ করেন। একইভাবে নারীদের স্তনে কোনো পরিবর্তন বা প্রাথমিক লক্ষণ দেখা দিলেও তারা তা গোপন রাখেন। স্তন ক্যানসারকে লজ্জা পাওয়া বা গোপন রোগ হিসেবে চিন্তা করার অবকাশ নেই। জীবনের দামে লজ্জার দাম পরিশোধ করা কোনোভাবেই সমীচীন নয়। স্তন ক্যানসার শনাক্তকরণে সমাজের সবাই সচেতন হলে স্তন ক্যানসার প্রাথমিক পর্যায়েই শনাক্ত করা সম্ভব। প্রাথমিক পর্যায়ে দ্রুত শনাক্ত করা গেলে এই রোগ ক্ষেত্রবিশেষে পুরোপুরি নিরাময়যোগ্য এবং এর মাধ্যমে স্তন ক্যানসারজনিত মৃত্যুহার কমিয়ে আনা সম্ভব।
শনাক্তকরণের উপায়: চিকিৎসকেরা ২০ বছর বয়স থেকে বাড়িতে বসে নিজেই নিজের স্তন পরীক্ষা করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এর মাধ্যমে স্তনে কোনো ধরনের অস্বাভাবিকতা বা পরিবর্তন থাকলে তা বোঝা যায়।
চিকিৎসকের সাহায্য: একজন চিকিৎসক বা অন্য কোনো পেশাদার স্বাস্থ্যসেবীর মাধ্যমে স্তনের পরীক্ষা করানো উচিত। রক্তচাপ মাপার মতোই এই পরীক্ষাকে একটি রুটিন পরীক্ষায় পরিণত করা উচিত। ম্যামোগ্রাফি: ম্যামোগ্রাফি হলো স্তনের একধরনের কম মাত্রার এক্স-রে। ম্যামোগ্রাফি স্তন টিস্যুর বৈশিষ্ট্যপূর্ণ ভর বা মাইক্রোক্যালসিফিকেশন পরীক্ষা করে স্তন ক্যানসারের প্রাথমিক শনাক্তকরণ নিশ্চিত করা হয়। ঝুঁকির মাত্রার ওপর নির্ভর করে ম্যামোগ্রামের সঙ্গে স্তনের এমআরআইও করা যেতে পারে।
রোডম্যাপ কেমন হওয়া উচিত : ২৯ থেকে ৩৯ বছর বয়সি নারীদের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার অংশ হিসেবে পেশাদার স্বাস্থ্যকর্মীর কাছে প্রতি এক থেকে তিন বছর অন্তর একটি ক্লিনিক্যাল স্তন পরীক্ষা করানো; ৪০ বছর বয়সের পর নারীদের প্রতিবছর একজন পেশাদার স্বাস্থ্যকর্মীর মাধ্যমে স্তন পরীক্ষা করানো; ২০ বছরের বেশি বয়সি নারীরা প্রতি মাসে একবার নিয়মিতভাবে স্তনের স্ব-পরীক্ষা (সেলফ ব্রেস্ট এক্সামিনেশন) করতে পারেন। এই পদ্ধতি কারও কাছে শিখে নিতে পারেন বা ইউটিউবে দেখে নিতে পারেন; ৪০ বছর বা তার বেশি বয়সি নারীদের প্রতিবছর একটি ম্যামোগ্রাম করা উচিত। যত দিন তারা সুস্থ থাকেন, তত দিন এই রুটিন চালিয়ে যাওয়া উচিত। তবে স্তনের স্ব-পরীক্ষা করার সময় একজন স্বাস্থ্যকর্মীকে দিয়ে দেখিয়ে নেবেন, তাদের স্ব-পরীক্ষার কৌশল সঠিক কিনা। স্তন ক্যানসারের জন্য উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা নারীদের প্রতিবছর একটি এমআরআই এবং ম্যামোগ্রাম করা উচিত।