সনদপ্রাপ্ত হিসাববিদেরা দেশের ব্যবসায় নেতৃত্ব দেন, ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। হিসাব পেশা হলো ব্যবসার ভাষা। সনদপ্রাপ্ত হিসাববিদেরাই ব্যবসা কিংবা শিল্পপ্রতিষ্ঠানের উচ্চপদে থাকেন। বলা হয়ে থাকে, হিসাব বিষয়ে পড়াশোনা এক ধরনের বিনিয়োগ। সমাজে প্রতিষ্ঠিত হতে চাইলে চিকিৎসক ও প্রকৌশলীর পাশাপাশি হিসাববিদের পেশার মতো ভালো পেশা নেই। পরীক্ষার ফল যেমন শিক্ষার্থীর এগিয়ে যাওয়ার সোপান, ফল দিয়ে যেমন শিক্ষার্থীর মেধা ও কর্মের মান যাচাই হয়, তেমনি মান যাচাইয়ে নৈতিক মানদণ্ড গুরুত্ব না পেলে ওই যাচাইয়ের ফলাফলে শিক্ষার্থীর প্রকৃত মান বোঝা যায় না। পরীক্ষার খাতা যারা দেখেন, সেই পরীক্ষক-নিরীক্ষকদের ভুলে শিক্ষার্থীদের ফল বিপর্যয়ও হয়ে থাকে। হিসাববিদরা ব্যবসা বা শিল্পপ্রতিষ্ঠানের নিরীক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরীক্ষার নিরীক্ষকদের মতোই তাদের ভূমিকা। পার্থক্য এটুকু যে, পরীক্ষার নিরীক্ষক দেখেন শিক্ষার্থীর উত্তরপত্র আর হিসাববিদ দেখেন তার নিয়োগকর্তার প্রতিষ্ঠানের হিসাববিবরণী। এখানে এদিক-সেদিক হলে শিক্ষার্থী-প্রতিষ্ঠানের প্রকৃত অবস্থা বোঝা কঠিন হয়। গতকাল শেয়ার বিজে ‘গভর্নরকে চিঠি: স্বচ্ছভাবে ব্যাংক অডিট সম্পন্ন করার দাবি’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। আমাদের প্রতিবেদক জানান, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুন্দর আর্থিক খাত ও অর্থনীতি প্রতিষ্ঠা করবে—এমন আশা ছিল দেশবাসীর। তবে আওয়ামী লীগ আমলের ব্যাংক খাত লুটপাটকারীদের সঙ্গে নিয়ে সময়ক্ষেপণ করছেন বর্তমান গভর্নর। এ-সংক্রান্ত একগুচ্ছ লিখিত অভিযোগ জমা পড়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে। বর্তমান পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে স্বচ্ছভাবে ব্যাংকের নিরীক্ষা কার্যক্রম সম্পন্ন করার দাবি জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা।
বলা হয়ে থাকে, নিরীক্ষকরা নিজ প্রতিষ্ঠানের অনেক তথ্য সচেতনভাবেই গোপন করেন। ফলে বিনিয়োগকারী কিংবা গ্রাহক সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে একপ্রকার অন্ধকারে থাকেন। তাই স্বচ্ছতার সঙ্গে নিরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা জরুরি। নিরীক্ষায় অস্বচ্ছতার কারণে ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান এমনকি দেশেরও অর্থনীতিরও বড় ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। সাধারণ মানুষের ধারণা এক্ষেত্রে বড় ভূমিকা হিসাববিদ ও নিরীক্ষকদের। নিরীক্ষকরা যদি নিয়ম মেনে দায়িত্ব পুঙ্খানুপুঙ্খ পালন করেন, তা হলে ব্যাংক খাতের অনিয়ম, দুর্নীতি, অর্থপাচার ও কেলেঙ্কারি চিহ্নিত করা সম্ভব হবে এবং দায়ী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আসা সহজ হবে। ব্যাংক খাতের অব্যবস্থাপনা ও কেলেঙ্কারি অনুদ্ঘাটিত থেকে গেলে অর্থপাচার ও কেলেঙ্কারিতে জড়িতরা ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাবে। পুঁজিবাজারে নিরীক্ষকদের ওপরে আস্থা রেখে বিনিয়োগকারীরা পুঁজিবাজারে বিভিন্ন কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেন। নিরীক্ষকরা একটি কোম্পানির অতিরঞ্জিত ও ভুয়া আর্থিক প্রতিবেদন তৈরি করলে বিনিয়োগকারীদের মাশুল দিতে হয়। ব্যাংক খাতের নিরীক্ষকরা স্বচ্ছতার সঙ্গে নিরীক্ষা করলে ব্যাংক খাতের সীমাবদ্ধতা সামনে আসবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার জন্য প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নেয়া সহজ হবে, ব্যাংক খাতে অর্থবহ সংস্কার করা সম্ভব হবে। নিরীক্ষা ও তদারকিতে যাতে অভিজ্ঞ ও নীতিবান কর্মকর্তারা দায়িত্ব পান, তা নিশ্চিত করার মাধ্যমে গেলে ব্যাংক খাতে বিগত সময়ে সংঘটিত অনিয়ম-দুর্নীতি উদ্ঘাটন করা প্রয়োজন। নীতিনির্ধারকরা সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবেন বলেই প্রত্যাশা।