Print Date & Time : 27 July 2025 Sunday 3:56 pm

‘স্বপ্নের’ হোম ডেলিভারি সেবায় তালগোল

নিজস্ব প্রতিবেদক: নভেল করোনাভাইরাসের (কভিড-১৯) প্রাদুর্ভাবে অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানই অস্তিত্ব রক্ষার জন্য সংগ্রাম করছে। ভোগ্যপণ্যের বাজার সংকুচিত হয়ে পড়া ও স্বাস্থ্যঝুঁকি বিবেচনায় অনেকেই ঝুঁকছে অনলাইনে পণ্য বিক্রয়ে।

চেইন সুপার শপ ‘স্বপ্ন’ এজন্য অনলাইনে পণ্যের ক্রয়াদেশ নিয়ে বাসায় তা পৌঁছে দেওয়া শুরু করেছে। নতুন এ সেবাটি চালু করার পর থেকেই গ্রাহক অসন্তোষ ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। অনেক সময়ে অভিযোগ করেও মিলছে না সমাধান।

চেইন সুপার শপ ‘স্বপ্ন’ অনলাইনে পণ্য সরবরাহ সেবা চালু করেছে, কিন্তু সেবাটি প্রদানে তালগোল পাকিয়ে ফেলেছে স্বপ্ন। ক্রয়াদেশ দিয়ে অর্থ পরিশোধের পর দুই সপ্তাহ পরও পণ্য যাচ্ছে না গ্রাহকের বাসায়।

এমন অভিযোগ উঠে এসেছে স্বপ্নের নিজস্ব ফেসবুক পেজ ‘স্বপ্ন হেল্প’-এ। প্রতিদিন অসংখ্য গ্রাহক অনলাইনে সেবাপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে নানা ধরনের জটিলতার অভিযোগ করছেন পেজটিতে, কিন্তু এসব সমস্যার সমাধান হচ্ছে সীমিতভাবেই।

রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় থাকা ফাহমিদা হোসেন অভিযোগ করেছেন স্বপ্ন হেল্প পেজে। তিনি বলেন, পণ্যের ক্রয়াদেশ দিয়ে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে অর্থও পরিশোধ করেছি, কিন্তু ২৪ দিন পার হলেও পণ্য পাইনি।

এখন অর্থ ফেরত অথবা পণ্য পেতে স্বপ্নে নিয়মিত মেইল দিতে হচ্ছে। এতে ভোগান্তি বাড়ছে। তারা যদি সেবা দিতে না পারে, তাহলে চালু করল কেন?

২৫ ধরনের পণ্যের ক্রয়াদেশ দিয়েছিলেন সামি চৌধুরী। তিনি স্বপ্নে অভিযোগ করে জানান, সাতটি পণ্য পাইনি। কিন্তু ওই পণ্যের জন্য পরিশোধ করা অর্থও ফেরত দেয়নি স্বপ্ন। কীভাবে দেবে তাও বলছে না। যখন ক্রয়াদেশ নিয়েছিল তখন কিন্তু বলেনি, পণ্য পাওয়া যাবে না।

আবার অনেকে পণ্য না পেয়ে ক্রয়াদেশ বাতিলও করতে শুরু করেছেন। সবচেয়ে গুরুতর অভিযোগ করেছেন নাজমুল তালুকদার নামে আরেক ক্রেতা। সাড়ে পাঁচ হাজার টাকার পণ্যের ক্রয়াদেশ দিয়েছিলেন অনলাইনে।

অর্থও পরিশোধ করেছেন ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে। কিন্তু পণ্য হাতে পাওয়ার পর দেখতে পান পণ্যের প্যাকেটে লেখা মূল্যের চেয়েও বেশি দাম রাখা হয়েছে তার কাছ থেকে।

অভিযোগ দিয়ে তিনি লিখেছেন, পাঁচ হাজার ৪৩৫ টাকার পণ্যের ক্রয়াদেশ দিই। কিন্তু অনলাইনের ফরমে যে দাম কেটে রাখা হয়, পণ্য হাতে পাওয়ার পর মোড়কে দেখি তার চেয়ে কম দাম লেখা। বিষয়টি প্রমাণসহ (ছবি তুলে) স্বপ্নকে জানিয়েছেন তিনি। এখনও এ বিষয়ে কোনো উত্তর পাননি প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে।

ক্রয়াদেশ অনুযায়ী পণ্য না পাওয়া, পণ্যর বাড়তি দাম রাখা, অর্থ ফেরত পাওয়ার প্রক্রিয়ায় কোনো বক্তব্য না পাওয়া, সময়মতো পণ্য হাতে না পাওয়া ও আদৌ পণ্য পাবে কি না এসব বিষয়ে এক ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে গ্রাহকদের মাঝে।

পণ্যের দামের বিষয়ে আরেক গ্রাহক অভিযোগ করে বলেন, ফোনে অর্ডার দেওয়ার ৬০ ঘণ্টা পর স্বপ্ন থেকে জানানো হলো, যে দামে পণ্যের অর্ডার দেওয়া হয়েছিল, সেই দামে সরবরাহ করা সম্ভব নয়। বাড়তি মূল্য দিয়ে পণ্য পাওয়া গেল অর্ডার দেওয়ার প্রায় ৭২ ঘণ্টা পর।

এ বিষয়ে জানতে সেলফোনে স্বপ্নের বিপণন বিভাগের প্রধান তানিম আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক সাব্বির হাসান নাসিরের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে বেশ কয়েকবার ফোন করার পরও রিসিভ না করায় সাব্বির হাসানের বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি।

বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও গত ২৬ মার্চ থেকে অঘোষিত লকডাউন চলছে। ফলে রাজধানীর দুই কোটি মানুষ এখন গৃহবন্দি। ঢাকার বাইরেও একই চিত্র। অধিক সচেতনতা রক্ষায় মানুষ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস ও ভোগ্যপণ্য ক্রয়ের জন্যও ঘর থেকে বের হচ্ছেন না।

এতে অনলাইনে পণ্য বিক্রি বৃদ্ধি পেয়েছে। অনেক নতুন প্রতিষ্ঠানের জন্ম হয়েছে অনলাইনে পণ্য বিক্রি ও তা বাসায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য। প্রতিষ্ঠিত অবকাঠামো খাতায় স্বপ্ন এক্ষেত্রে এগিয়ে ছিল। কিন্তু সেখানে সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে নানা হয়রানির শিকার হয়ে গ্রাহকরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।