নিজস্ব প্রতিবেদক: সম্প্রতি সারা দেশে জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানগুলোয় চুরি-ডাকাতি, ছিনতাই ও ব্যবসায়ীদের ওপর সরাসরি আক্রমণের ঘটনা বেড়েছে। এসব অপরাধ সংঘটনের সময় সন্ত্রাসীদের হাতে জুয়েলারি ব্যবসায়ী খুন ও হত্যাচেষ্টার ঘটনাও বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে জান-মালের নিরাপত্তা প্রদানে সরকারের সহায়তা চেয়েছেন উদ্বিগ্ন জুয়েলারি ব্যবসায়ীরা।
গণমাধ্যমে গতকাল বুধবার পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এই দাবি করেছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস)।
সম্প্রতি জুয়েলারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ঘিরে সংঘটিত অপরাধ ও অপরাধীদের দমনে বর্তমান সরকারের নেওয়া কার্যকর উদ্যোগের জন্য কৃজ্ঞতাও প্রকাশ করেছে বাজুস। গণমাধ্যমের তথ্য পর্যালোচনা করে সংগঠনটি বলছে, সাম্প্রতিক সময় চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। চোর ও ডাকাত চক্রের মূল লক্ষ্যে পরিণত হয়েছে জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানগুলো। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত আট মাসে রাজধানীসহ সারা দেশে ১৭টি প্রতিষ্ঠানে চুরি ও ডাকাতি সংঘটিত হয়েছে, যাতে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৪০ কোটি টাকা। এই ঘটনায় নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানগুলো।
এ প্রসঙ্গে বাজুসের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি গুলজার আহমেদ বলেন, জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানের ওপর বারবার টার্গেট করা হচ্ছে। এসব ঘটনায় আতঙ্ক বিরাজ করছে ব্যবসায়ীদের মাঝে। এই পরিস্থিতিতে জুয়েলারি ব্যবসায়ীরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। এই পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতির জন্য স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সহযোগিতা কামনা করছি। বাজুসের সাধারণ সম্পাদক বাদল চন্দ্র রায় বলেন, এ ধরনের অপরাধের পুনরাবৃত্তি রোধে দেশের জুয়েলারি প্রতিষ্ঠান ও স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ জানাচ্ছি। একই সঙ্গে জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের লাইসেন্সকৃত বৈধ অস্ত্র অনতিবিলম্বে ফেরত প্রদানের জন্য তিনি অনুরোধ করেন।
পরিসংখ্যান তুলে ধরে বাজুস জানিয়েছে, নতুন বছরের প্রথম তিন মাসেই সারা দেশে চুরি ও ডাকাতি সংঘটিত হয়েছে ১১টি, যার মধ্যে গত ৩ জানুয়ারি ধানমন্ডির ঝিগাতলায় সীমান্ত সম্ভার মার্কেটে ‘ক্রাউন ডায়মন্ড অ্যান্ড জুয়েলার্স’ থেকে ১৫৯ ভরি স্বর্ণের অলঙ্কার, ৯ জানুয়ারি সিলেটের ‘নুরানী জুয়েলার্স’ থেকে ২৫০ ভরি স্বর্ণ, একই দিন ফরিদপুরের প্রগতি জুয়েলার্সে ভরদুপুরে চুরির চেষ্টা, ১২ জানুয়ারি পটুয়াখালীর কলাপাড়ার ‘ঐশী জুয়েলার্স’ থেকে ৬০ ভরি স্বর্ণের অলঙ্কার ও নগদ ২ লাখ টাকা এবং ২৪ জানুয়ারি রাজধানীর হাজারীবাগে ‘ইতি জুয়েলার্স’ থেকে ৭০ ভরি স্বর্ণের অলংকার লুট হয়।
আর পরের মাসে ৯ ফেব্রুয়ারি কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থেকে ২৫ ভরি স্বর্ণ, ২০ ফেব্রুয়ারি ফরিদপুরের ‘পুষ্পিতা জুয়েলার্স’ থেকে ১৪ ভরি স্বর্ণ ও নগদ ৩ লাখ ২৫ হাজার টাকা ডাকাতি করে নিয়ে যায়। এ ছাড়া গত ২৩ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর বনশ্রীতে ব্যবসা শেষে ফেরার সময় নিজ বাসার সামনে গুলি করে ২০০ ভরি স্বর্ণ ও ২ লাখ টাকা লুট করে নিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি মিরপুর ১০-এর শাহআলী প্লাজা মার্কেটে জুমার নামাজের সময় ১৪-১৫ জনের একটি ডাকাতচক্র লুনা জুয়েলার্স থেকে তালা কেটে ডাকাতির চেষ্টা করে। দিন-দুপুরেও এমন ঘটনা ব্যবসায়ীদের মনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে।
শুধু তা-ই নয়, গত ৯ মার্চ ঝালকাঠিতেও স্বর্ণের দোকানে ডাকাতির চেষ্টা করে। সবশেষ গত ৯ মার্চ দিবাগত রাতে আশুলিয়ায় নিজ দোকানে দিলীপ কুমারকে কুপিয়ে হত্যা করে ১৫-২০ ভরি স্বর্ণ লুট করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। এর আগে গত বছরের ৭ সেপ্টেম্বর রাতে রামপুরায় অবস্থিত মোল্লা টাওয়ারের দ্য মনিকা জুয়েলার্স ও দ্য সুলতানা জুয়েলার্স নামক দুটি জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানে ডাকাতি করে নিয়ে যাওয়া হয় ১ হাজার ৯৫ ভরি স্বর্ণ, ৪৫০ ভরি রুপা ও নগদ ১৩ লাখ টাকা। এ ছাড়া ৮ নভেম্বর লক্ষ্মীপুরে নিজ প্রতিষ্ঠান থেকে বাসায় ফেরার পথে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয় হিরা লাল দেবনাথকে এবং ৯ নভেম্বর মিরপুরের স্পার্কেল জুয়েলার্স ও আবান গোল্ড থেকে সোয়া তিন কোটি টাকা মূল্যের স্বর্ণের অলঙ্কার, ২৮ অক্টোবর খুলনার দৌলতপুরে দত্ত জুয়েলার্স থেকে পাঁচ ভরি স্বর্ণের অলঙ্কার ও নগদ দুই লাখ টাকা লুট করাসহ মোহাম্মদপুরস্থ টোকিও স্কয়ার মার্কেটে একটি ডায়মন্ডের দোকানে চুরির ঘটনা ঘটে।