রিকশাচালক, কুমার, জেলে, ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতা, স্বল্প পুঁজির দোকানি, মুদি-চা বিক্রেতাসহ নিন্ম আয়ের মানুষ জামানতবিহীন ঋণ পাবেন। গতকাল শেয়ার বিজের প্রতিবেদনে বলা হয়, কভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ে ক্ষতিগ্রস্ত প্রান্তিক পর্যায়ের দোকানি, উদ্যোক্তাসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নিন্ম আয়ের পেশাজীবীদের ঋণ দিতে বিশেষ তহবিল গঠন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আগের বরাদ্দসহ তহবিলটির আকার হবে ৫০০ কোটি টাকা। এ তহবিল থেকে ব্যাংকগুলো ১ শতাংশ সুদে টাকা নেবে। এরপর তারা গ্রাহকদের বিনা জামানতে সর্বোচ্চ ৭ শতাংশ সুদে ঋণ দেবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, এ ঋণ পাবেন ১০, ৫০ ও ১০০ টাকার ব্যাংক হিসাবধারী প্রান্তিক, ভূমিহীন কৃষক, নিন্ম আয়ের পেশাজীবী এবং স্কুল ব্যাংকিং হিসাবধারী ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। যাদের হিসাব নেই, তারাও ঋণ পাবেন। তবে এ জন্য তাদের নতুন করে হিসাব খুলতে হবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা কেন্দ্রীয় ব্যাংক রোববার এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।
কভিড সংক্রমণের শুরুতে নিন্ম আয়ের এ পেশাজীবী-কর্মজীবীদের জন্য ২০০ কোটি টাকার তহবিল গঠন করা হয়েছিল। তখন তহবিলটি থেকে ঋণ নিয়ে ব্যাংকগুলো ক্ষুদ্রঋণ প্রদানকারী সংস্থাগুলোকে দিত। আর ওই সংস্থাগুলো ৯ শতাংশ সুদে ঋণ দিত। এখন এই তহবিলের আকার বাড়িয়ে ৫০০ কোটি টাকা করা হয়েছে। আর সুদের হার কমিয়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
নিন্ম আয়ের শ্রমজীবীরা ঋণ পেতে অনেক ভোগান্তির শিকার হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন কর্মসূচি তাদের মনে আশার সঞ্চার করবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি বলছে, ব্যাংকগুলো নিজস্ব শাখা, উপশাখা, এজেন্ট ব্যাংকিং, এমএফএস ব্যবহার করে এ ঋণ দিতে পারবে। তবে সেবা মাশুল কোনোভাবেই নির্ধারিত হারের চেয়ে বেশি নেয়া যাবে না। প্রায়ই নিয়ন্ত্রক সংস্থার নির্দেশনা পরিপালিত হয় না। তাই নিবিড় তদারকি করতে হবে সংস্থাটিকেই। মনে রাখতে হবে, এখানে ঋণগ্রহীতারা ব্যাংককর্মীদের ‘খুশি’ করতে পারবেন না। ব্যাংককর্মীদেরও মানবিক আচরণ করতে হবে। কোনোভাবেই লক্ষ্যভুক্ত জনগোষ্ঠী যেন হয়রানির শিকার না হন, তাদের দায়িত্বশীল হতে হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন এ ঋণে একজন গ্রাহক সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ পাবেন। তবে গ্রুপ ঋণের ক্ষেত্রে ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দেয়া যাবে। এ ঋণ নিতে কোনো জামানত লাগবে না। অবশ্য ব্যক্তিগত গ্যারান্টি নেয়া যাবে। তিন লাখ টাকার বেশি ঋণে ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিমের সুবিধা নেয়া যাবে। ব্যাংক নিজস্ব উৎস থেকে গ্যারান্টির টাকা দেবে, গ্রাহকের ওপর তা চাপানো যাবে না। ঋণের মেয়াদ হবে তিন বছর। তবে প্রথম ছয় মাস ঋণ পরিশোধে বিরতি থাকবে।
নি¤œ আয়ের কর্মজীবীরা বিনা জামানতে ঋণ না পেয়ে দাদন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চড়া সুদে টাকা নিয়ে সর্বস্বাস্ত হচ্ছেন। সুদে-আসলে ঋণের কয়েকগুণ টাকা পরিশোধ করতে না পেরে অনেকে এলাকাছাড়া হন। আত্মহননের দৃষ্টান্তও আছে। একজনের ঋণ পরিশোধ করতে কয়েকজনের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে ঋণের জালে আটকে যায় সাধারণ মানুষ। জামানতবিহীন ঋণদান কর্মসূচিতে সফল হলে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী স্বাবলম্বী হবেন। দাদন ব্যবসায়ী, সুদখোর মহাজনদের মুখাপেক্ষী হতে হবে না।