Print Date & Time : 11 September 2025 Thursday 6:35 am

স্বাধীন স্বাধীন দিকে দিকে

কাজী সালমা সুলতানা: ২০ ডিসেম্বর, ১৯৭১। সাবেক প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া তার চিফ অব স্টাফ জেনারেল আবদুল হামিদ খান এবং নিরাপত্তা সচিব মেজর জেনারেল গোলাম উমর খানসহ কয়েকজন পদস্থ কর্মকর্তাকে সেনাবাহিনী থেকে অবসর দেয়া হয়।

এদিকে মুজিবনগর সরকারের অর্থমন্ত্রী ক্যাপ্টেন মনসুর আলী কুষ্টিয়া ও যশোর সফর করে বলেন, দেশ পাকিস্তানের কাছ থেকে মুক্ত করেই দায়িত্ব শেষ হয়ে যায়নি। দেশের জনগণের হাতে স্বাধীনতার সুফল পৌঁছে দিতে হবে। শিগগিরই দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য শুরু হবে।

জুলফিকার আলি ভুট্টো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরে সরাসরি প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে পৌঁছেন। ঘণ্টা দুই পর ঘোষণা দেয়া হয়, ভুট্টো পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টের শপথ নিয়েছেন। এক রেডিও ভাষণে বললেন, পূর্বাঞ্চলের পরাজয় তিনি মেনে নেবেন না। তিনি বলেন, আমরা পূর্ব পাকিস্তান ফিরে পেতে লড়াই করব।

এদিন ইয়াহিয়া খান শেখ মুজিবুর রহমানের প্রাণদণ্ড কার্যকর করতে চেয়ে ভুট্টোর মতামত চান। ভুট্টো বলেন, শেখ মুজিবকে হত্যা করা হলে পশ্চিম পাকিস্তানিরা আর দেশে ফিরতে পারবে না।

এদিন নাটোরে অবস্থিত ৯ হাজার পাকিস্তানি সেনা মুক্তি ও মত্রবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করতে শুরু করে। বগুড়া, হিলি, কুষ্টিয়া, ঈশ্বরদী, রাজশাহী ও নওগাঁয় পাকিস্তানি সেনারা মুক্তি ও মিত্রবাহিনীর সম্মিলিত কমান্ডের কাছে আত্মসমর্পণ করে। উল্লেখ্য, ১৩ থেকে ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধারা নওগাঁ শহর ঘেরাও করে রেখেছিল।

২০ ডিসেম্বর লন্ডনে অবস্থিত পাকিস্তান দূতাবাসে ইকোনমিক মিনিস্টার পদে নিয়োজিত এ এফ এম আহসানুল কবির বাংলাদেশের পক্ষে যোগ দেন। এছাড়া পাকিস্তান দূতাবাসে নিয়োজিত পাকিস্তানি অফিসাররা একযোগে পদত্যাগ করে বাংলাদেশের পক্ষে যোগদান করে। আনন্দবাজার পত্রিকা লেখে, নুরুল আমিন বলতে বাধ্য হলেন শেখ মুজিবকে জেলে রাখা যুক্তিহীন।

আত্মসমর্পণকারী পাকিস্তানি জেনারেল নিয়াজিকে আজ বিশেষ বিমানযোগে ঢাকা থেকে কলকাতা নিয়ে যাওয়া হয়। তার সঙ্গে ছিলেন সাবেক গভর্নরের উপদেষ্টা মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলি।

ভারতের ইস্টার্ন কমান্ডের মুখপাত্র জানান, গত রাত পর্যন্ত আটক পাকিস্তানি সৈন্য সংখ্যা ৬৫ হাজার ৬৭০। এর সঙ্গে যোগ হয় চট্টগ্রাম গ্যারিসনে আটক আট হাজার সৈনিক। তিনি আরও জানান, পশ্চিম পাকিস্তানি আমলা-কর্মচারী, পুলিশ প্রভৃতি সহ ২০ হাজার জনকে এক মাসের মধ্যে ভারতে নিয়ে যাওয়া হবে।

এদিন বিজয়ের আনন্দ ভাগাভাগি করতে মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে ১৯৭১ সালের ২০ ডিসেম্বর জড়ো হন মুক্তিযোদ্ধারা। কিন্তু আকস্মিক এক মাইন বিস্ফোরণে সেদিন মারা যান অনেক মুক্তিযোদ্ধা। তাদের অধিকাংশই ছিলেন গেরিলা বাহিনীর সদস্য। এলাকাবাসী নিহত মুক্তিযোদ্ধাদের সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের দক্ষিণ-পূর্ব অংশে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারের পাশে সমাধিস্থ করেন। সেই থেকে ২০ ডিসেম্বর মৌলভীবাজারের স্থানীয় শহিদ দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। এদিন জামায়াতে ইসলামী, নেজামে ইসলাম পার্টি, পিপিপি, পিডিপি, মুসলিম লীগের সব দল নিষিদ্ধ করা হয়।

তথ্যসূত্র: মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ও মূলধারা ’৭১