প্রতিনিধি, গাজীপুর : গাজীপুরের গণপূর্ত বিভাগের ঠিকাদারি কাজকে কেন্দ্র করে নিয়ম ভেঙ্গে স্বার্থ হাসিল করতে না পেরে সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী স্বপন চাকমাসহ অন্যান্য প্রকৌশলীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা রটনা ছড়ানোর অভিযোগ উঠেছে।
গাজীপুরের গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী কার্যালয়ের বরাতে এবিষয়ে আরো জানা গেছে, গাজী-(ডি-৩) ২০১৮-২০১৯ স্মারকে এস এইচ জয়েন্ট ভেঞ্চার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে শহীদ তাজউদ্দীন মেডিকেল কলেজ এন্ড হাসপাতালের ল্যান্ড ডেভলপমেন্ট শীর্ষক কাজ বাস্তবায়নের জন্য ২০১৯ সালের ৮ এপ্রিল এনওএ প্রদান করা হয়েছিল। তার ওই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ২০১৯ সালের ২৫ এপ্রিল চুক্তি সম্পাদন পূর্বক কাজের সাইট বুঝিয়ে দেয়া হয়েছিল। চুক্তিপত্র অনুযায়ী ১৮০ দিনের মধ্যে ওই গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পাদনের কথা ছিল এবং তাকে বিশেষভাবে বলা হয়েছিল ওই সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করে দিতে।
আর তা না পারলে প্রকল্পের অন্যান্য অঙ্গ কাজ যথাসময়ে শুরু করা সম্ভব হবে না। কিন্ত কাজ বুঝে নেওয়ার পর ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাজের গতি সন্তোষজনক ছিল না। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সরেজমিনে বহুবার সাইট পরিদর্শন করেছেন যার স্থির চিত্র গাজীপুর গণপূর্ত বিভাগের প্রেরিত বিভিন্ন প্রতিবেদনে পাওয়া যায়। কাজটি সম্পন্ন করার জন্য তাকে বিশেষভাবে বার বার তাগিদ দেয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে এ কাজ নিয়ে ১ বছর পাঁচ মাস অতিবাহিত হলেও কেন প্রকল্পের কাজ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ হলো না তার সুনিদিষ্ট ব্যাখ্যা চেয়ে পত্র প্রাপ্তির তিন কর্ম দিবসের মধ্যে অবহিত করার জন্য তাকে বলা হয়েছিল। সন্তোষজনক ব্যাখ্যা প্রদানে ব্যর্থ হলে ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে লিকুইডেটেড ড্যামেজ আরোপ পূর্বক দরপত্রের শর্তানুসারে চুক্তিপত্র বাতিলসহ অন্যান্য আইনানুগ ব্যবস্থা করা হবে বলে অফিসিয়াল ভাবে জানানো হয়েছিল।
প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন সমস্যার উল্লেখ্য করে কাজটি শেষ করার জন্য আরো কিছু দিন সময় চেয়ে আবেদন করেছিল। পরে দরপত্রের লিকুইড ড্যামেজ আরোপ করার শর্তে মোট ৬১৯ দিন কাজের সময়ও বর্ধিত করা হয়েছিল। কিন্ত তাতেও তিনি কাজ সম্পন্ন করেননি। ২০২১ সালের ২২ এপ্রিল পি ডব্লিউ ডি গাজী-১৪০৫ স্মারকে ঠিকাদারকে জানানো হয়েছিল কেন টানা ২৮ দিন কাজ বন্ধ ছিল। এতে জেনারেল কন্ডিশন অব কন্ট্রাক্ট এর ৮৯ ধারা অনুসারে ফানডামেন্টাল ব্রিচেজ অব কন্ট্রাক্ট হিসেবে বিবেচিত হয়। সেহেতু ওই ধারা অনুসারে ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না তাকে জানাতে বলা হয়েছিল।
পরবর্তীতে প্রকল্পের অন্যান্য কাজ বাস্তবায়নের জন্য সরকারি প্রচলিত আইন বিধি অনুসরণপূবর্ক উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সাপেক্ষে দীর্ঘ প্রায় আড়াই বছর সময় অতিবাহিত হওয়ার পর ২০২১ সালের ২৪ অক্টোবর (পিপিসি) ২৫.৩৬.০০০০.৪১০.১৪.০০২.১৪৯৪২৮ (উশা-২) এর স্মারকে এস এইচ জয়েন্ট ভেঞ্চার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ওই চুক্তি বাতিল করা হয়। কাজের চুক্তি বাতিল হওয়াতে ওই প্রতিষ্ঠানের সত্বাধিকারী সংক্ষুদ্ধ হয়ে প্রতিশোধ নিতে গণপূর্ত বিভাগের দায়িত্বরত প্রকৌশলীদের নামে মামলা করেন।
শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল নির্মাণ প্রকল্পের ভূমি উন্নয়ন কাজের তথ্য পর্যালোচনা বিষয়ে অফিস সূত্র জানান, অনুমোদিত ডিপিপিতে সংস্থানকৃত প্রায় সাড়ে ২৪ কোটি টাকার বিপরীতে মাত্র সাড়ে ১২ কোটি টাকায় কাজটি প্রায় সমাপ্ত করা হয়েছে।
অভিযোগের বিষয়ে গাজীপুর গণপূর্ত বিভাগের সাবেক র্নিবাহী প্রকৌশলী স্বপন চাকমাকে ফোন করা হলে তিনি বেশিকিছু বলতে রাজী হননি, তবে বর্তমানে কর্মরত কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলার এবং গণপূর্ত বিভাগে রক্ষিত দলিলাদির সহায়তা নেয়ার অনুরোধ জানান।
এদিকে গাজীপুর গণপূর্ত বিভাগের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা ও কর্মচারি নাম না প্রকাশ করার শর্তে জানান, ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সত্বাধিকারি পতিত ফ্যাস্টিট সরকারের আমলে এই গণপূর্ত দপ্তরে দাঁপিয়ে বেড়িয়েছে। সুযোগ সুবিধা নিয়েছে। কর্মকর্তাদের হুমকি ধামকী দিয়েছেন। তিন ইচ্ছা মতো কাজ করতে না পারায় সম্প্রতি হুমকি দিচ্ছেন, পাশাপাশি মিথ্যা রটনা রটাচ্ছেন। যা সম্পূর্ণ উদ্দেশ্য প্রণোদিত।
এ বিষয়ে ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সত্বাধিকারী বক্তব্য নিতে একাধিবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি।
এছাড়াও গতকাল বুধবার এ বিষয়ে জানতে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষকে মোবাইল ফোনে দিলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
###