Print Date & Time : 9 July 2025 Wednesday 8:40 pm

স্বৈরাচার পুনর্বাসিত হওয়ার পদক্ষেপ নেয়া উচিত হবে না

নিজস্ব প্রতিবেদক: বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের এমন কোনো পদক্ষেপ নেয়া উচিত না, যেন পলাতক স্বৈরাচার ও তাদের দোসররা পুনর্বাসনের সুযোগ পায়। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর লেডিস ক্লাবে দেশের বিশিষ্ট নাগরিক ও পেশাজীবীদের সম্মানে বিএনপির ইফতার আয়োজনে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এ কথা বলেন তিনি।

তারেক রহমান বলেন, ‘বিশ্বের গণতান্ত্রিক রাজনীতির বিধি ব্যবস্থায় শেষ পর্যন্ত রাজনীতিবিদদের হাতেই রাষ্ট্র পরিচালনার ভার বর্তায়। রাষ্ট্র ও রাজনীতির ভালোমন্দের অনেক কিছুই নির্ভর করে রাজনীতিবিদদের দেশপ্রেম ও রাষ্ট্র পরিচালনার নীতির ওপর।’
তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রে রাজনীতিবিদ, সিভিল সোসাইটি ও পেশাজীবীরা একে অপরের পরিপূরক। রাষ্ট্রের সিভিল সোসাইটি ও পেশাজীবীদের ভূমিকা দুর্বল থাকলে সুস্থ ও সবল রাজনীতি আশা করা যায় না।’

‘পলাতক স্বৈরাচারের শাসনকালে সিভিল সোসাইটি ও পেশাজীবীদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ফ্যাসিবাদের সক্রিয় সহযোগী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিল। দেশে সে সময় গুম-খুন-অপহরণ-নারী-ধর্ষণ-নির্যাতন-দুর্নীতি-অর্থ পাচার, এমনকি আয়নাঘরের মতো বর্বর বন্দিশালার বিরুদ্ধেও তাদের একটি বিরাট অংশ প্রতিবাদ করার সাহস পায়নি কিংবা করেনি। বরং আমরা দেখেছি উল্টো ফ্যাসিবাদের পক্ষে অপকর্মের জাস্টিফাই করে নতুন ন্যারেটিভ বা বয়ান তৈরি করতে,’ বলেন তিনি। ‘গত ৫ আগস্ট মাফিয়ার পতনের পর গণতান্ত্রিক মানবিক বাংলাদেশ গড়ার অপার সম্ভাবনার দ্বার উšে§াচিত হয়েছে’ মন্তব্য করে তারেক রহমান বলেন, ‘এমন পরিস্থিতিতে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় রাজনীতিবিদ ও কর্মীদের পাশাপাশি দেশের বিশিষ্ট নাগরিক সমাজ ও পেশাজীবীদের দেশ ও জনগণের স্বার্থ রক্ষায় আরও কার্যকর ও ইতিবাচক ভূমিকা পালনের সুযোগ তৈরি হয়েছে। সরকার ও রাজনীতির গুণগত পরিবর্তনে বিশিষ্ট নাগরিক এবং পেশাজীবীদের মেধা ও অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগানোর জন্য বিএনপি সংবিধানে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করেছে।’

তিনি বলেন, ‘বর্তমানে সংস্কার ও নির্বাচনকে দৃশ্যত যেভাবে মুখোমুখি করে ফেলা হয়েছে, এটি নিঃসন্দেহে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যমূলক। যারা সংস্কার শেষ করার পর জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বলছেন, তাদের উদ্দেশ্য করে বলতে চাই যেটি শেষ হয়ে যায় সেটি সংস্কার নয়। কারণ সংস্কার কখনও শেষ হয় না, সংস্কার একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া।’ তারেক রহমান বলেন, ‘পলাতক স্বৈরাচার বারবার জনগণের ভোট ছাড়াই সংসদ গঠন করেছিল, তারা সংবিধান মানেনি। এ কারণেই বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি মনে করে গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে কেতাবি কিংবা প্রথাগত সংস্কারের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক অধিকার এবং আচরণের ব্যবহারিক প্রয়োগ।’
‘জনগণের গণতান্ত্রিক চর্চার মধ্য দিয়েই সংস্কার প্রক্রিয়া টেকসই, সফল ও কার্যকর হতে পারে’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে গৌণ ইস্যুকে মুখ্য ইস্যু বানাতে গিয়ে নিজেদের অজান্তে এই ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্যের মধ্যে সংশয়-সন্দেহের জš§ দেয়া হয়েছে বা হচ্ছে।’

অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে তারেক বলেন, ‘সরকারের এমন কোনো পদক্ষেপ নেয়া উচিত হবে না, যেন রাষ্ট্র ও রাজনীতিতে পলাতক স্বৈরাচারের দোসররা পুনর্বাসিত হওয়ার সুযোগ পায়। পতিত স্বৈরাচারের দোসরদের হাতে এখনো রাষ্ট্র থেকে লুণ্ঠন করা জনগণের পকেট থেকে লুণ্ঠন করা হাজার হাজার কোটি টাকা রয়ে গেছে। এ পরিস্থিতিতে জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন হওয়ার অর্থ সারাদেশে ঘাপটি মেরে থাকা পলাতক স্বৈরাচারের দোসরদের রাজনীতিতে পুনর্বাসনের সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়া।’
‘দীর্ঘ দেড় দশকের মাফিয়া শাসনকালে তরুণ প্রজšে§র প্রায় সাড়ে তিন কোটি ভোটারসহ কেউ ভোট দিতে পারেননি। সুতরাং এই ভোটারদের রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার জন্য সবার আগে প্রয়োজন জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান। নাগরিকরা রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতাশালী না হলে কোনো সংস্কারই কিন্তু টেকসই হবে না,’ বলেন তিনি।