বীর মুক্তিযোদ্ধা জগৎজ্যোতি দাসের আজ ৭২তম জন্মবার্ষিকী। তিনি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ভাটি বাংলার গেরিলা বাহিনীর কমান্ডার ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে তার অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীরবিক্রম হিসেবে ভূষিত করে। জগৎজ্যোতি ১৯৪৯ সালে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬৯ সালে আইয়ুববিরোধী আন্দোলনে অংশ নিয়ে বিশেষ দায়িত্ব পালনে ভারতের গৌহাটির নওপং কলেজে ভর্তি হন। সেখানে অবস্থানকালে অনেকগুলো অঞ্চলের ভাষা আয়ত্ত করেন এবং ধীরে ধীরে নকশালপন্থিদের সঙ্গে জড়িত হন। সেখান থেকেই অস্ত্র গোলাবারুদ সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা নিয়ে আবার দেশে ফিরে আসেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে যোগ দেন ভারতের মেঘাল রাজ্যের ইকো-১ ট্রেনিং ক্যাম্পে। যুদ্ধের প্রথমদিকে সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের অধীনে বিভিন্ন আক্রমণে অংশগ্রহণ করেন জগৎজ্যোতি। প্রশিক্ষিত ৪২ জন যোদ্ধাদের নিয়ে গঠন করেন ফায়ারিং স্কোয়াড ‘দাস পার্টি’। জগৎজ্যোতি ইংরেজি, হিন্দি, গৌহাটির আঞ্চলিক ভাষায় পারদর্শী ছিলেন। ভারতীয় মিত্রবাহিনীর সঙ্গে তার যোগাযোগ ও দাস পার্টির জন্য অস্ত্র ও গোলাবারুদ সংগ্রহ করতেন। জগৎজ্যোতি ১৯৭১ সালের ১৬ অক্টোবর পাকবাহিনীর বার্জে আক্রমণ চালিয়ে বার্জটি নিমজ্জিত করে। তার দাসবাহিনী পাকিস্তানি শত্রু ঘাঁটি ধ্বংস হয়। পাহাড়পুর অপারেশন, বানিয়াচংয়ে থানা ও কার্গো বিধ্বস্তসহ বেশ কয়েকটি অপারেশনে দাস পার্টির যোদ্ধারা সফল হয়। বদলপুর অপারেশন ছিল মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে একটি বিশাল সাফল্য। ১৬ নভেম্বর ১৯৭১। জগৎজ্যোতির দল বদলপুর অপারেশনে আজমিরীগঞ্জ, মারকুলি, গুঙ্গিয়ারগাঁও প্রভৃতি অঞ্চলে পাকিস্তানিদের শত্রু ঘাঁটি ধ্বংস করে দেয়। প্রতিরোধের মুখে পাকসেনারা হেলিকপ্টারও ব্যবহার করে। যুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানি ক্যাম্প থেকে মাত্র ২০০ গজ দূরে রাজাকার-পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণে ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে দাস পার্টি। সম্মুখ যুদ্ধের একপর্যায়ে জগৎজ্যোতির চোখে গুলিবিদ্ধ হলে তিনি পানিতে নিশ্চল হয়ে ঢলে পড়েন। রাজাকাররা জ্যোতির অর্ধমৃত দেহ আজমিরীগঞ্জে নিয়ে এসে জনসমক্ষে তিনদিন ধরে অমানুষিক নির্যাতন চালায়। পরে তার মৃতদেহ কুশিয়ারা নদীতে ভাসিয়ে দেয়। অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকার তাকে সর্বোচ্চ বীরশ্রেষ্ঠ খেতাব দেয়ার ঘোষণা দিয়েছিল। কিন্তু স্বাধীনতার পর সে প্রতিশ্রুতি থেকে ফিরে আসে সরকার।
কাজী সালমা সুলতানা