নাট্যকার ও অভিনেতা বিল্পবী বিজন ভট্টাচার্যের আজ ১১৫তম জন্মবার্ষিকী। তিনি ১৯০৬ সালের ১৭ জুলাই বর্তমান রাজবাড়ী জেলার খানখানাপুরে জন্মগ্রহণ করেন। কিশোর বয়সেই তিনি অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দিয়ে কারাবরণ করেন। পরে কলকাতার আশুতোষ কলেজ ও রিপন কলেজে অধ্যয়নকালে জাতীয় আন্দোলনে (১৯৩১-৩২) যোগ দেন এবং মহিষবাথানে লবণ সত্যাগ্রহ আন্দোলনে সম্পৃক্ত হন। ১৯৩১ সালে তিনি ব্রিটিশবিরোধী জাতীয় আন্দোলনে যোগ দেন। বিজন ভট্টাচার্য কিছুদিন (১৯৩১-৩২) আনন্দবাজার পত্রিকায় চাকরি করেন এবং ১৯৩৮-৩৯ সালে তিনি আলোচনা, ফিচার ও স্কেচ লেখার কাজ করেন। ১৯৩৪-৩৫ সালে ছাত্র আন্দোলনের কর্মী হিসেবে তিনি বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রথম দিকে তিনি ‘অরণি’ পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত হন। ১৯৪২ সালে কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য পদ লাভ করেন। তিনি ভারত ছাড় আন্দোলন, ফ্যাসিবাদবিরোধী লেখক ও শিল্পী সংঘ স্থাপন এবং প্রগতি লেখক সংঘ ও ভারতীয় গণনাট্য সংঘ গঠনে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। তার নাট্যজীবনের শুরু ১৯৪০-এর দশকে। নবনাট্য আন্দোলনের পথিকৃৎ বিজন গণজীবনের সংগ্রাম ও দুঃখ-দুর্দশা, শোষণ-বঞ্চনা, প্রগতিশীল চিন্তা ও সমাজবোধ নিয়ে নাটক রচনা করে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের পরিচয় দেন। তিনিই প্রথম বাংলা রঙ্গমঞ্চকে পুরাণ ও ইতিহাসের রোমান্টিক প্রভাব থেকে মুক্ত করেন। তার প্রথম নাটক আগুন (১৯৪৩) নাট্যভারতীতে অভিনীত হয়। পরে তিনি রচনা করেন জবানবন্দী (১৯৪৩); এটি কৃষকজীবনের আলেখ্য। তার প্রতিভার সার্থকতম নিদর্শন হলো নবান্ন (১৯৪৪) নাটক। ১৯৪৬ সালের দাঙ্গার পটভূমিকায় রচনা করেন নাটক ‘জীয়নকন্যা’, ‘মরাচাঁদ’, ‘কলঙ্ক’ ও ‘গোত্রান্তর’। তার উল্লেখযোগ্য দুটি গল্প ‘জনপদ’ ও ‘রাণী পালঙ্ক’। তিনি মুম্বাইয়ে চলচ্চিত্রে অভিনয় ও ফিল্ম স্ক্রিপ্ট লেখার কাজও করেন। তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রগুলো হলো: বাড়ি থেকে পালিয়ে, মেঘে ঢাকা তারা, সুবর্ণরেখা, পদাতিক, যুক্তি তক্কো গপ্পো ইত্যাদি। নাটকশিল্পে বিশেষ অবদানের জন্য কেন্দ্রীয় সংগীত নাটক আকাদেমি, পশ্চিমবঙ্গ সংগীত নাটক আকাদেমি ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তাকে পুরস্কৃত করে। ১৯৭৮ সালের ১৯ জানুয়ারি কলকাতায় তিনি মারা যান।
কাজী সালমা সুলতানা