১৯৫২ সালের মহান ভাষা আন্দোলন এবং স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য নাম ভাষা মতিন। তার পুরো নাম আবদুল মতিন। ২০০১ সালে তিনি দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার একুশে পদক অর্জন করেন। আব্দুল মতিন ১৯২৬ সালের ৩ ডিসেম্বর সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলার ধুবুলিয়া গ্রামের এক মধ্যবিত্ত কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৫২ সালে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে তিনি ভাষা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি তোলায় তার অবদান অন্যতম। শিক্ষার্থীদের সংগঠন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন তিনি। সেই জনসভায় ১৪৪ ধারা ভঙ্গেও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ভাষা আন্দোলনের পর আবদুল মতিন ছাত্র ইউনিয়ন গঠনে ভূমিকা রাখেন এবং পরে সংগঠনটির সভাপতি হন। ১৯৫৪ সালে পাবনা জেলা কমিউনিস্ট পার্টির সম্পাদক হন তিনি। আবদুল মতিনের নেতৃত্বে পাবনা জেলার জনগণ মুক্তিযুদ্ধে সাহসী ভূমিকা পালন করেন। আবদুল মতিন মওলানা ভাসানী ‘ন্যাপ’, পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টি (এমএল) ও বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টিতে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভূমিকা রাখেন। ১৯৯২ সালে তিনি বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি গঠনে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। আবদুল মতিন ভাষা আন্দোলন ও গণচীনের উৎপাদন ব্যবস্থা ও আত্মজীবনীমূলক মোট ৭টি গ্রন্থ রচনা করেন। তার উল্লেখযোগ্য রচনা ২১ ফেব্রুয়ারি ও ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন প্রসঙ্গে, গণচীনের উৎপাদন ব্যবস্থা ও দায়িত্ব প্রথা, ভাষা ও একুশের আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন কি এবং তাতে কি ছিল, ভাষা আন্দোলন: ইতিহাস ও তাৎপর্য, আব্দুল মতিন ও আহমদ রফিক; বাঙালি জাতির উৎস সন্ধান ও ভাষা আন্দোলন, জীবন পথের বাঁকে বাঁকে। ভাষাসৈনিক আবদুল মতিন একুশে পদক, ঢাকার ৪০০ বছর উদ্যাপন উপলক্ষে ঢাকা রতœ সম্মাননা, বাংলা একাডেমি কর্তৃক ফেলোশিপ প্রদান, ২৮ ডিসেম্বর, ২০০১সহ অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেন। তিনি ২০১৪ সালের ৭ অক্টোবর মৃত্যুবরণ করেন।
কাজী সালমা সুলতানা