Print Date & Time : 29 July 2025 Tuesday 10:21 pm

স্মরণীয়-বরণীয়

সাংবাদিক, পুঁথি সংগ্রাহক, লোকতত্ত্ববিদ মোহাম্মদ সাইদুর রহমান। বাংলাদেশের লোকসাহিত্যচর্চার ইতিহাসে  একজন সাধক-সংগ্রাহক হিসেবে তিনি অনন্য ভূমিকা রেখে গেছেন। জীবনের ৫০ বছরের বেশি সময় তিনি এ দেশের লোকসাহিত্য ও লোকশিল্প নিদর্শন সংগ্রহের সঙ্গে জড়িয়ে ছিলেন। মোহাম্মদ সাইদুর রহমান ১৯৪০  সালের এই দিনে কিশোরগঞ্জ জেলার বিন্নগাঁও গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা কুতুবদ্দিন আহমদ ছিলেন লোকগীতি গায়েন ও পুঁথি পাঠক। লোকসংস্কৃতির পারিবারিক আবহ মোহাম্মদ সাইদুরকে ছোটবেলা থেকেই বাংলার লোকসংস্কৃতি সম্পর্কে উৎসাহী করে তুলে। সাইদুর রহমান সাপ্তাহিক পূর্বদেশ, সাপ্তাহিক চিত্রালীতে সাংবাদিক হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি এবং কিশোরগঞ্জ বার্তার সম্পাদনার কাজও করেন। ১৯৬২ সালে তিনি বাংলা একাডেমিতে লোকসাহিত্য সংগ্রাহক পদে যোগ দেন। চাকরিরত অবস্থায় ১৯৬৮ সালে তিনি ম্যাট্রিক পাস করেন। বাংলাদেশের তিনটি জেলার গ্রামে গ্রামে ঘুরে গীতিকবিতা, কাহিনি, পুঁথি, কেচ্ছার কথক ও লেখন সংগ্রহ করে বেশ কয়টি মূল্যবান গ্রন্থ তিনি সংকলন করেন। তিনি তার বাড়িতেই পুঁথিপত্র থেকে মৈমনসিংহ গীতিকা পান। মৈমনসিংহ গীতিকা পড়তে গিয়ে তিনি চন্দ্রাবতীর সন্ধান পান। চন্দ্রাবতী সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে মোহাম্মদ সাইদুরের সংগ্রাহক-জীবনের সূত্রপাত। তিনি দশটি লোককাহিনি সংগ্রহ ও বাঁধাই করে বাংলা একাডেমিতে জমা দেন। বাংলা একাডেমি, সোনারগাঁও লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন এবং বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে লোকশিল্প সংগ্রহে তিনি উল্লেখযোগ্য অবদান রাখেন। এছাড়া তিনি শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের সাহচর্যে থেকে নকশিকাঁথার একটি ভাণ্ডার গড়ে তোলেন। মোহাম্মদ সাইদুর রহমান তার নিজ গ্রামেও একটি লোকশিল্প জাদুঘর গড়ে তুলেন। ১৯৭৪ সালে বাংলা একাডেমিতে তার একক লোকশিল্প সংগ্রহ প্রদর্শনী হয়। ১৯৮৮ সালে লন্ডনের হোয়াইট চ্যাপেল আর্ট গ্যালারিতে ওপেন এয়ার প্রদর্শনীতে তার নিজস্ব লোকশিল্প সংগ্রহের প্রদর্শনী হয়। তিনি বাম রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সাইদুর রহমান তার কর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলা একাডেমি ফেলোশিপ এবং কারুশিল্পী পরিষদ থেকে সম্মাননা পান। ২০০৭ সালের ৩ মার্চ  তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

কাজী সালমা সুলতানা