Print Date & Time : 10 September 2025 Wednesday 10:04 pm

স্মরণীয়-বরণীয়

বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের গেরিলা বাহিনীর কমান্ডার বীরবিক্রম জগৎজ্যোতি দাসের আজ ৫০তম মৃত্যুবার্ষিকী। তিনি ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে ভাটি বাংলার গেরিলা বাহিনীর কমান্ডার ছিলেন এবং তার অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীরবিক্রম উপাধিতে ভূষিত করে। জগৎজ্যোতি দাস ১৯৪৯ সালের ২৬ এপ্রিল হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ উপজেলার জলসুখা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। স্কুলজীবনেই জগৎজ্যোতি আইয়ুববিরোধী আন্দোলনে যুক্ত হন। ১৯৬৯ সালে ভারতের গৌহাটির নওপং কলেজে ভর্তি হন। সেখানে অবস্থানকালে অনেকগুলো অঞ্চলের ভাষা আয়ত্ত করেন,  সেখানে নকশালপন্থিদের সঙ্গে জড়িত হন ও  অস্ত্র গোলাবারুদ সম্পর্কে ধারণা নিয়ে দেশে ফিরে আসেন। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হামলা ও হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর শপথ নেন জগৎজ্যোতি। যোগ দেন ভারতের মেঘালয় রাজ্যের ইকো-১ ট্রেনিং ক্যাম্পে। ট্রেনিং শেষে মেজর শওকত আলীর নেতৃত্বে গঠিত হয় মুক্তিযুদ্ধের ৫নং সেক্টরে যোগ দেন। এ সেক্টরের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পান কমান্ডার জগৎজ্যোতি ও ‘দাস কোম্পানি’। মহান মুক্তিযুদ্ধে তার নেতৃত্বে ‘দাসপার্টি’ মূর্তিমান আতঙ্ক হয়ে দাঁড়ায় পাক-হানাদারদের কাছে। দিরাই, শাল্লা, ছাতক, আজমিরীগঞ্জ, বানিয়াচং, জামালগঞ্জ, তাহিরপুর, কিশোরগঞ্জ ও নেত্রকোনার নৌপথ পাক দখলমুক্ত রাখার যুদ্ধে লড়ে যান তারা। ১৯৭১ সালের ১৬ নভেম্বর, বদলপুর অপারেশন মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে একটি বিশাল সাফল্য। বদলপুরে দাস পার্টির প্রতিরোধের মুখে পাকসেনারা শক্তি বৃদ্ধি করতে বাধ্য হয়। গুলি ছোড়ার জন্য হেলিকপ্টারও ব্যবহার করা হয়। রণাঙ্গনে যুদ্ধ চলাকালে পরিস্থিতির ভয়াবহতা চিন্তা করে জ্যোতি সহযোদ্ধাদের অন্যত্র নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেন। এরপর দল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে থাকেন জ্যোতি ও ইলিয়াছ। হঠাৎ সহযোদ্ধা ইলিয়াস পাঁজরে গুলিবিদ্ধ হন। সেই অবস্থায় তিনি যুদ্ধ চালিয়ে যান। যুদ্ধের একপর্যায়ে জগৎজ্যোতি নতুন ম্যাগাজিন লোড করে পজিশন নিয়ে শত্রুর অবস্থান দেখার জন্য মাথা উঁচু করতেই একটি বুলেট তার বুকে বিদ্ধ হয় এবং তিনি মৃত্যুবরণ করেন। গুলিবদ্ধ হওয়ার পর তাকে রাজাকাররা তার গায়ে পেরেক বিদ্ধ করে। আজমিরীগঞ্জ বাজারে শত শত লোকের সামনে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে ক্ষতবিক্ষত করা হয় তার লাশকে। পরে তার লাশ ভেড়ামোহনার জলে ভাসিয়ে দেয়া হয়।

কাজী সালমা সুলতানা