বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে আত্মদানকারী শহিদ মুক্তিযোদ্ধা মোস্তফা কামাল। ১৯৭১ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় দরুইন গ্রামে পাকবাহিনীর সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধে তিনি শহিদ হন। মুক্তিযুদ্ধে চরম সাহসিকতা আর অসামান্য বীরত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ‘বীরশ্রেষ্ঠ’ উপাধিতে ভূষিত হন। ‘বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল ১৯৪৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর ভোলা জেলার দৌলতখান থানার পশ্চিম হাজীপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার ছেলেবেলা কাটে বাবার কর্মস্থল কুমিল্লা সেনানিবাসে। ২০ বছর বয়সে হঠাৎ একদিন তিনি বাড়ি থেকে নিরুদ্দেশ হয়ে যান। পরে ১৯৬৮ সালে পাকিস্তানের চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে চাকরি চূড়ান্ত হওয়ার পর মা-বাবা তার সন্ধান পান। ১৯৭১-এর প্রথম দিকে মোস্তফা কামালকে চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টকে কুমিল্লা সেনানিবাস থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পাঠানো হয়। তখন সারাদেশে যুদ্ধের বীভৎসতা ছড়িয়ে পড়ছিল। এপ্রিল মাসে মোস্তফা কামাল গঙ্গাসাগর প্রতিরক্ষা অবস্থানের দরুইন গ্রামে নিয়োজিত আলফা কোম্পানির ২নং প্লাটুনের একজন সেকশন কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পান। সেখানে পাকিস্তানিরা হেলিকপ্টার গানশিপ, নেভাল গানবোট ও এফ-৮৬ বিমানযোগে ত্রিমুখী আক্রমণ ও তীব্র গোলাবর্ষণ করে মুক্তিবাহিনীর ৪ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের প্রতিরক্ষা অবস্থানের ওপর। ১৮ এপ্রিল সকালে পাকসেনারা দক্ষিণ, পশ্চিম এবং উত্তর দিক থেকে দরুইনকে ঘিরে ফেলে। বেলা ১১টার দিকে শুরু হয় শত্রুর গোলাবর্ষণ। ১২টার দিকে আসে পশ্চিম দিক থেকে সরাসরি আক্রমণ। কয়েকজন শহিদ হন। মোস্তফা কামাল মরিয়া হয়ে পাল্টা গুলি চালাতে থাকেন। তার পূর্ব দিকের সৈন্যরা পেছনে সরে নতুন অবস্থানে সরে যেতে থাকে এবং মোস্তফাকে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করে। মোস্তফা কামাল সহযোদ্ধাদের সরিয়ে দিয়ে নিজে একাই পরিখায় থেকে পাকবাহিনীর সামনে প্রতিরক্ষার দুর্গ গড়ে তোলেন। মোস্তফার ক্রমাগত নিখুঁত ফায়ারে পাকিস্তানিদের প্রায় ২০-২৫ জন হতাহত হন। পাকিস্তানি সৈন্যরা মরিয়া হয়ে মোস্তফার অবস্থানের ওপর মেশিনগান ও মর্টারের গোলাবর্ষণ করতে থাকে। একপর্যায়ে মোস্তফার এলএমজির গুলি নিঃশেষ হয়ে যায় এবং তিনি মারাত্মকভাবে জখম হন। তখন পাকিস্তান বাহিনীর সৈনিকরা তাকে বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে। পরে গ্রামের সাধারণ মানুষ তাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ার দরুইন গ্রামে সমাহিত করে।
কাজী সালমা সুলতানা