Print Date & Time : 23 July 2025 Wednesday 6:25 pm

স্মরণীয়-বরণীয়

পাটের জীবনরহস্য উম্মোচনকারী জিনতত্ত্ববিদ ড. মাকসুদুল আলমের আজ সপ্তম মৃত্যুবার্ষিকী। পাটের জিনোম সিকোয়েন্স উম্মোচনের গবেষণায় নেতৃত্ব দিয়ে বাংলাদেশকে সোনালি আঁশের সুদিন ফেরানোর স্বপ্ন দেখিয়েছেন তিনি। তার নেতৃত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ডেটাসফটের একদল গবেষকের যৌথ প্রচেষ্টায় ২০১০ সালের মাঝামাঝি সময়ে সফলভাবে উম্মোচিত হয় পাটের জিন নকশা। ড. মাকসুদুল আলম ১৯৫৪ সালের ১৪ ডিসেম্বর ফরিদপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা দলিলউদ্দিন আহমেদ পূর্ব পাকিস্তান রাইফেলসের (বর্তমান বিজিবি) কর্মকর্তা ছিলেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদ হন তিনি। তরুণ বয়সে মাকসুদুল আলম তার কনিষ্ঠ ভাই মাহবুবুল আলম ও বন্ধু জোনায়েদ শফিককে নিয়ে গড়ে তোলেন ‘অনুসন্ধানী বিজ্ঞান ক্লাব’। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করে রাশিয়ায় চলে যান। ১৯৭৯ সালে মস্কো স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে তিনি অণুপ্রাণবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৮২ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অণুপ্রাণবিজ্ঞানে পিএইচডি করেন মাকসুদুল। এর পাঁচ বছর পর জার্মানির ম্যাক্স প্লাঙ্ক ইনস্টিটিউট অব বায়োকেমিস্ট্রি থেকে প্রাণরসায়নেও তিনি পিএইচডি করেন। ১৯৯২ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৯৭ সালে তিনি আবিষ্কার করেন ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া হেলো ব্যাকটেরিয়ামের জীবনরহস্য। এর পর থেকে তার নামের সঙ্গে একের পর এক নিয়মিত যুক্ত হতে থাকে নানা প্রাণরহস্য উম্মোচনের কৃতিত্ব। ২০০১ সালে তিনি হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। ২০০৩ সালে তিনি সেখানে বংশাণুসমগ্র বিজ্ঞান, প্রোটিনসমগ্র বিজ্ঞান ও জৈব তথ্যবিজ্ঞানে অগ্রসর গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন। ২০০৯ সাল থেকে তিনি মনোনিবেশ করেন তোষা পাটের জিন নকশা উম্মোচনে নেতৃত্বদানে। ২০১০ সালে তিনি পাটের জীবনরহস্য উম্মোচন করে দেশে-বিদেশে সাড়া জাগান। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে পেঁপে, মালয়েশিয়ার হয়ে রাবার ও বাংলাদেশের হয়ে পাট ও ছত্রাকের জীবনরহস্য উম্মোচন করেন। এই বিজ্ঞানী ২০১৪ সালের ২০ ডিসেম্বর মৃত্যুবরণ করেন।

কাজী সালমা সুলতানা