Print Date & Time : 3 September 2025 Wednesday 12:33 am

স্মরণীয়-বরণীয়

উপমহাদেশের বিখ্যাত শিক্ষাব্রতী ও দানবীর হাজী মুহম্মদ মুহসীন। তিনি হিন্দু, মুসলিম সবার সম্প্রদায়ের কাছে শ্রদ্ধার মানুষ। হাজী মুহসীন অঢেল সম্পত্তির মালিক ছিলেন। এসব সম্পদ তিনি শিক্ষা ও মানবকল্যাণে বিলিয়ে গেছেন। দানশীলতার কারণে তিনি দানবীর খেতাব পেয়েছেন। মুহম্মদ মুহসীন ১৭৩২ সালের ৩ জানুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের হুগলিতে জন্মগ্রহণ করেন। মুহসীনের পূর্ব পুরুষরা অত্যন্ত ধনী ছিলেন। ইরান থেকে বাংলায় আসা তার বাবা হাজি ফয়জুল্লাহ ছিলেন একজন ধনী জায়গিরদার। তার মা জয়নব খানমেরও হুগলি, যশোর, মুর্শিদাবাদ ও নদীয়ায় প্রচুর জমি ছিল। বোন মন্নুজানের মৃত্যুর পর মুহম্মদ মুহসীন উত্তরাধিকারী হিসেবে বোনের সম্পত্তির মালিক হন। শৈশবে গৃহশিক্ষকের তত্ত্বাবধানে তিনি শিক্ষার্জন শুরু করেন। পরে উচ্চশিক্ষার জন্য মুর্শিদাবাদ যান। শিক্ষাজীবন শেষে তিনি দেশ ভ্রমণে বের হন। তিনি মক্কা, মদিনা, কুফা, কারবালাসহ ইরান, ইরাক, আরব, তুরস্ক এমন নানা স্থান সফর করে দীর্ঘ ২৭ বছর পর তিনি দেশে ফিরে আসেন। দেশে ফিরে তিনি বোন মন্নুজানের বাসায় থেকে নবাব এস্টেট দেখাশোনা করতেন। ১৮০৩ সালে বোন মন্নুজানের মৃত্যুর পর মুহসীন তার বিশাল সম্পত্তি লাভ করেন। এত সম্পদের মালিক হয়েও মুহসীন ছিলেন খুব ধার্মিক ও নিরহঙ্কারী। তিনি সাধারণভাবে জীবনযাপন করতেন। তিনি ছিলেন চিরকুমার। কথিত আছে, মুহম্মদ

মুহসীন তার প্রতিষ্ঠিত ইমামবাড়া প্রাসাদে বাস করতেন না। তার পাশেই একটি ছোট কুটিরে তিনি থাকতেন। আর কোরআন শরিফ নকল করে যা পেতেন, তা দিয়েই জীবনযাপন করতেন। ১৮০৬ সালে তিনি ‘মুহসীন ফান্ড’ নামক তহবিল প্রতিষ্ঠা করেন। এ তহবিল ধর্মীয় কর্মকাণ্ড, পেনশন, বৃত্তি ও দাতব্য কর্মকাণ্ডের জন্য বরাদ্দ করা হয়। ১৭৬৯-৭০ সালের দুর্ভিক্ষের সময় তিনি অনেক লঙ্গরখানা স্থাপন করেন এবং সরকারি তহবিলে অর্থ সহায়তা প্রদান করেন। শিক্ষানুরাগী মুহম্মদ মুহসীন তার অর্থ দিয়ে বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করেছেন। মুহসীন ফান্ডের অর্থে আজও ভারত ও বাংলাদেশের অসংখ্য দরিদ্র ছাত্রদের পড়াশোনার ব্যবস্থা করা হয়। হুগলিতে ‘হুগলি মুহসীন কলেজ’ ও ‘চট্টগ্রামের সরকারি হাজী মুহম্মদ মুহসীন কলেজ’ প্রতিষ্ঠার সময় মুহসীনের ওয়াকফকৃত অর্থ ব্যবহƒত হয়। তার পৃষ্ঠপোষকতায় গড়ে ওঠে ‘দৌলতপুর মুহসীন মাধ্যমিক বিদ্যালয়’। ১৮১২ সালের এই দানবীর মৃত্যুবরণ করেন। তার স্মরণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুহসীন হলের নাম রাখা হয়েছে। ঢাকায় অবস্থিত বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ঘাঁটির নাম বিএনএস হাজী মুহসীন।

কাজী সালমা সুলতানা