Print Date & Time : 3 September 2025 Wednesday 9:43 pm

স্মরণীয়-বরণীয়

আজ শিক্ষাবিদ এবং অধ্যাপক শহীদ সৈয়দ মুহম্মদ শামসুজ্জোহার ৫৩তম মৃত্যুবার্ষিকী। আইয়ুববিরোধী আন্দোলনের সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আক্রমণের মুখে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের রক্ষা করতে গিয়ে শহিদ হন তিনি। শামসুজ্জোহাকে দেশের প্রথম শহীদ বুদ্ধিজীবী হিসেবে গণ্য করা হয়। বাংলা ভাষা আন্দোলনের সময়ও তিনি প্রত্যক্ষভাবে আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সৈয়দ মুহম্মদ শামসুজ্জোহা ১৯৩৪ সালের ১ মে পশ্চিমবঙ্গে জন্মগ্রহণ করেন। দেশ বিভাগের পর ১৯৫০ সালের প্রথম দিকে শামসুজ্জোহা তার পরিবার নিয়ে তৎকালীন পূর্ববাংলায় চলে আসেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন বিভাগে স্নাতকোত্তরে ভর্তি হন। ১৯৬১ সালে জোহা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ডেভেলপমেন্ট অফিসার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন এবং একই বছর ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের লেকচারার পদে যোগদান করেন। সেখানে অধ্যাপনাকালে তিনি বৃত্তি নিয়ে লন্ডন ইম্পেরিয়াল কলেজে পিএইচডি ও ডিআইসি ডিগ্রি লাভ করে ১৯৬৪ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে এসে পুনরায় অধ্যাপনা শুরু করেন। ১৯৬৬ সালে তিনি রিডার পদে উন্নীত হন। ১৯৬৮ সালে আইয়ুব সরকারের বিরুদ্ধে গণ-আন্দোলন দানা বাঁধে। আন্দোলনের একপর্যায়ে ১৯৬৯ সালের ২০ জানুয়ারি ছাত্রনেতা আসাদুজ্জামান ও ১৫ ফেব্রুয়ারি তথাকথিত আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার অভিযুক্ত সার্জেন্ট জহুরুল হক নিহত হন। এর প্রতিবাদে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে বিক্ষোভ করেন। তারা সামরিক বাধা উপেক্ষা করে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ড. শামসুজ্জোহা সে সময় সামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন এবং বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি না চালানোর অনুরোধ করেন। তার অনুরোধ উপেক্ষা করে সেনাবাহিনী মিছিলে গুলিবর্ষণ করে। তখন ড. শামসুজ্জোহা বলেন, ‘সেনাদের বুলেট আগে আমার বুকে বিদ্ধ হবে, তারপর আমার ছাত্রদের আঘাত করবে’। এ কথা বলে ফিরে আসার সময় পেছন দিক থেকে সেনাসদস্যরা গুলি করে। গুলিবিদ্ধ হয়ে ড. জোহা মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। বিনা চিকিৎসায় পরের দিন তার মৃত্যু হয়। তার মৃত্যুতে সারাদেশে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে এবং এর ফলে আইয়ুব সরকারের পতন ত্বরান্বিত হয়। 

কাজী সালমা সুলতানা