বাংলাদেশের চলচ্চিত্র আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ মুহম্মদ খসরু। লেখক, সম্পাদক ও দক্ষ সংগঠক হিসেবে তিনি ছিলেন নন্দিত। তিনি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউটের প্রশিক্ষক ছিলেন। ১৯৬৩ সালে প্রতিষ্ঠিত ‘পাকিস্তান চলচ্চিত্র সংসদ’ গড়ে তুলতে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তার উদ্যোগে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সংসদের তত্ত্বাবধানে প্রতিষ্ঠিত হয় ফিল্ম স্টাডি সেন্টার। বাংলাদেশ ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজ এবং জাতীয় ফিল্ম আর্কাইভ গড়ে তুলতেও তিনি অবদান রাখেন। মুহম্মদ খসরু ১৯৪৬ সালে ভারতের হুগলী জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক বাড়ি কেরানীগঞ্জ উপজেলার রুহিতপুর ইউনিয়নের মোহনপুর গ্রামে। ভারতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার পর পঞ্চাশের দশকে তার পরিবার ঢাকা চলে আসে। বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সংস্থার (বিসিক) নকশা কেন্দ্রে আলোকচিত্রী হিসেবে তিনি কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৬৮ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত চলচ্চিত্রবিষয়ক পত্রিকা ‘ধ্রুপদি’ সম্পাদনা করেন। ‘ধ্রুপদি’ দুই বাংলার অন্যতম শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রের কাগজের স্বীকৃতি পায়। এ ছাড়া তিনি চলচ্চিত্র পত্রিকা ‘চলচ্চিত্রপত্র’, ‘ক্যামেরা যখন রাইফেল’, ‘সূর্যদীঘল বাড়ী’ বিশেষ সংখ্যা সম্পাদনা করেন। প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক ও অভিনেতা রাজেন তরফদারের বিখ্যাত চলচ্চিত্র ‘পালঙ্ক’-এ সহকারী পরিচালক হিসেবে তিনি কাজ করেন। মুহম্মদ খসরু চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ১৯৭০-এর দশকে বিখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক ঋত্বিক ঘটকের একটি সাক্ষাৎকার তিনি ‘ধ্রুপদি’ পত্রিকাতে প্রকাশ করেন, যা পরে উপমহাদেশের বিভিন্ন পত্রিকায় পুনর্মুদ্রণ হয়। তার রচিত গ্রন্থ ‘বাংলাদেশের চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলন’, ‘বাংলাদেশে চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনের ভূমিকা’, ‘সাক্ষাৎকার চতুষ্টয়’। বাংলাদেশে চলচ্চিত্র সংস্কৃতির বিকাশে ৫০ বছর নিরবচ্ছিন্ন অবদানের জন্য তিনি হীরালাল সেন আজীবন সম্মাননায় ভূষিত হন। এছাড়া তিনি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে সুবর্ণজয়ন্তী পদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদ আজীবন সম্মাননা ২০১৭ লাভ করেন। মুহম্মদ খসরু ২০১৯ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন।
কাজী সালমা সুলতানা