স্মরণীয়-বরণীয়

স্বনামধন্য সংগীত পরিচালক ও সুরকার শেখ সাদী খানের ৭২তম জন্ম বার্ষিকী আজ। তাকে বাংলাদেশের সংগীতের জাদুকর বলে অভিহিত করা হয়। তিনি ১০৫টিরও বেশি সিনেমায় সংগীত পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন। এখন পর্যন্ত সুর করেছেন প্রায় ৮ হাজারেরও বেশি গান। শেখ সাদী খান ১৯৫০ সালের ৩ মার্চ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার শিবপুর গ্রামের এক সংগীত সমৃদ্ধ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা উপমহাদেশের প্রখ্যাত সুর সাধক ওস্তাদ আয়েত আলি খাঁ। সুর সম্রাট ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ তার চাচা। বাবার হাত ধরেই তিনি সংগীত শিক্ষা শুরু করেন। প্রথমে তবলা ও তারপর বেহালা শেখেন। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজিয়েট স্কুলে তার শিক্ষাজীবন শুরু। পরে ঢাকার ধানমন্ডি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পাস করে তিনি ঢাকা সংগীত মহাবিদ্যালয় থেকে আইমিউজ ও বিমিউজ ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৬৩ সালে মেজভাই সরোদ বাদক ওস্তাদ বাহাদুর খানের সঙ্গে ভারতে যান বেহালায় উচ্চাঙ্গসংগীত শেখার জন্য। তিন বছর তার অধীনে তালিম নিয়ে শেখ সাদী খান ১৯৬৫ সালে বাংলাদেশে ফিরে এসে সে বছরই রেডিও পাকিস্তানে বেহালা বাদক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৬৮ সালে বেহালা বাদক হিসেবে তৎকালীন পাকিস্তান টেলিভিশনে যোগ দেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ হলে তিনি স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রের সঙ্গে যুক্ত হন। স্বাধীনতার পর তিনি বাংলাদেশ বেতারে সংগীত পরিচালক হিসেবে যোগদান করেন। সত্তরের দশকে তিনি চলচ্চিত্রে পদার্পণ করেন। ১৯৭৭ সালে সংগীত পরিচালক হিসেবে সারাদেশে খ্যাতি লাভ করেন। তার সুরে গান করেছেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী মান্না দে, আশা ভোঁসলে, সাবিনা ইয়াসমিন, এন্ড্রু কিশোর, রুনা লায়লাসহ দেশি-বিদেশি অনেক শিল্পী। তার গানের মধ্যে উল্লেখযোগ্যÑতোমার চন্দনা মরে গেছে, পৃথিবীতে প্রেম বলে কিছু নেই, জীবন মানে যন্ত্রণা ইত্যাদি।

তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, বাচসাস পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কার-সম্মাননা অর্জন করেন। ২০০৬ সালে ঘানি চলচ্চিত্রের জন্য শ্রেষ্ঠ সংগীত পরিচালক বিভাগে এবং ২০১০ সালে ভালোবাসলেই ঘর বাঁধা যায় না চলচ্চিত্রের জন্য শ্রেষ্ঠ সুরকার বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। শিল্পকলা ও সংগীতে বিশেষ অবদানের জন্য ২০২১ সালে বাংলা একাডেমি তাকে সম্মানসূচক ফেলোশিপে সম্মানিত করে।

কাজী সালমা সুলতানা