ভাষাসৈনিক ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, বাংলাদেশের ১৯তম রাষ্ট্রপতি, প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ জিল্লুর রহমান। তিনি বায়ান্নর বাংলা ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত দেশের সব আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। জিল্লুর রহমান ১৯২৯ সালের ৯ মার্চ বর্তমান কিশোরগঞ্জের ভৈরবপুরে জ গ্রহণ করেন। তার পিতা মেহের আলী মিঞা ছিলেন আইনজীবী, ময়মনসিংহ লোকাল বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং জেলা বোর্ডের সদস্য। তিনি ১৯৪৬ সালে ভৈরব কে.বি পাইলট মডেল হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক পাস করেন। এরপর ঢাকা কলেজ থেকে আইএ পাস করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাস বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি ও এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি আইন বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৪৭ সালে কলেজে পড়ার সময় জিল্লুর রহমান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সান্নিধ্যে আসেন। ১৯৫৩ সালে তিনি ফজলুল হক হল ছাত্র সংসদের ভিপি, ১৯৫৬ সালে কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। ভাষা আন্দোলন, বাষট্টির সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন, ছেষট্টির ছয় দফা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানসহ প্রতিটি গণ-আন্দোলনে তিনি সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদ সদস্য নিযুক্ত হন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র পরিচালনা এবং জয় বাংলা পত্রিকার প্রকাশনার সঙ্গে যুক্ত হন। বাহাত্তর সালে গণপরিষদ সদস্য হিসেবে বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নে অংশ নেন এবং ১৯৭৩ সালে জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি তিনবার ১৯৭৪, ১৯৯২ ও ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৫ সালে সপরিবারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর জিল্লুর রহমান প্রায় চার বছর কারাবন্দি ছিলেন। ১৯৮১ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত তিনি আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় পদে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তিনি স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় মারা যান জিল্লুর রহমানের স্ত্রী, মহিলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভানেত্রী আইভী রহমান। ২০০৯ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি তিনি বাংলাদেশের ১৯তম রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ২০১৩ সালের ২০ মার্চ তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
কাজী সালমা সুলতানা