সোভিয়েত বিপ্লবের মহান নেতা ভ্লাদিমির ইলিচ উলিয়ানভ লেনিন। তিনি সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রথম রাষ্ট্রপ্রধান। রুশ বিপ্লবী এবং কমিউনিস্ট রাজনীতিবিদ লেনিন অক্টোবার বিপ্লবের বলশেভিকদের প্রধান নেতা ছিলেন। আন্তর্জাতিক সাম্যবাদের প্রধান ব্যক্তিত্ব হিসেবে তিনি মার্কসবাদ-লেনিনবাদ তত্ত্বের প্রবক্তা হিসেবেও বিশ্বের রাজনৈতিক ইতিহাসে প্রতিষ্ঠিত। তার ধারণাগুলো মার্কসবাদ-লেনিনবাদ হিসেবে পরিচিত। ইলিচ উলিয়ানভ লেনিন ১৮৭০ সালের ২২ এপ্রিল জার শাসিত তৎকালীন রাশিয়ার সিমবির্স্ক শহরে জন্ম গ্রহণ করেন। ১৮৮৭ সালে তিনি স্নাতক ডিগ্রি ও ১৮৯১ সালে সেন্ট পিটার্সবার্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন পাস করে সামারাতে আইন ব্যবসা শুরু করেন। ১৮৯৩ সালে সেন্ট পিটার্সবার্গে আইন ব্যবসাকালে তিনি মার্কসবাদীদের অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। ১৮৯৫ সালে লেনিন রাজনীতিক হিসেবে কারারুদ্ধ হন। পিটার্সবার্গ কারাগারে বন্দি অবস্থায় তিনি লিখেন মার্কসবাদী পার্টির প্রথম খসড়া কর্মসূচি। বন্দি লেনিনকে ১৮৯৭ সালে পূর্ব সাইবেরিয়ার নির্জন স্থানে নির্বাসন দেয়া হয়। এই নির্বাসন তার জন্য এক অপূর্ব সুযোগ সৃষ্টি করে। এ সময় লেনিন ৩০টি বই রচনা করেন। এর মধ্যে অন্যতম ছিল ‘রাশিয়ায় পুঁজিবাদের বিকাশ’। এই সময়ে তিনি রাশিয়ার শোষিত শ্রমিক এবং সর্বহারা গোষ্ঠীকে নিয়ে একটি দল গঠনে উদ্যোগী হন। ১৯০৫ সালে লেনিন রাশিয়ায় বিপ্লবের সূচনা করেন। সেই বিপ্লবকে রাজতন্ত্র থেকে রাশিয়ার পুঁজিবাদে উত্থান বলে সমাজ বিশ্লেষকরা মনে করেন। এটি ফেব্রুয়ারি বিপ্লব নামে খ্যাত। ১৯১৭ সালে ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের মাধ্যমে রাশিয়ায় সংসদ ‘দুমা’ গঠনসহ স্থানীয় শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু শাসনব্যবস্থা তখনও জার পরিবারের নিয়ন্ত্রণে থেকে যায়। দ্বিতীয় জার এ সময় লেনিনকে রাশিয়া থেকে বহিষ্কার করে। একই বছর সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট পার্টি বা বলশেভিক পার্টির নেতৃত্বে লেনিন অক্টোবর বিপ্লবের ডাক দেন। এই বিপ্লবের মাধ্যমে লেনিন বিশ্বে প্রথম সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রথম রাষ্ট্রপ্রধান হন। তিনি ছিলেন বলশেভিক পার্টির প্রধান এবং এ বিপ্লবের নেতৃত্বদানকারী। লেনিনকে বিংশ শতাব্দীর প্রধান ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তিনি গণমানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার নেতা ও সোভিয়েত ইউনিয়নের জনক হিসেবে বিশ্বব্যাপী পরিচিত। লেনিন ১৯২৪ সালের ২১ জানুয়ারি তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর তিন বছর পর ১৯২৭ সালে তার মৃতদেহ বিশেষ রাসায়নিকের মাধ্যমে লেনিন স্মৃতিসৌধে রাখা হয়।
কাজী সালমা সুলতানা