উপমহাদেশের বিখ্যাত সংগীত বিশেষজ্ঞ ও গবেষক সুধীন দাশ। বাংলাদেশে সংগীতে যাদের বিশেষ অবদান রয়েছে, সুধীন দাশ তাদের অন্যতম। সংগীতের প্রতিটি শাখায় তিনি সদর্পে বিচরণ করে নিজেকে সংগীতের একটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেন। লালনগীতির ক্ষেত্রেও তার অবদান সর্বজনস্বীকৃত। তিনিই প্রথম লালনগীতির স্বরলিপি গ্রন্থ প্রকাশ করেন। তিনি নজরুল ইনস্টিটিউট থেকে ১৬টি ও নজরুল একাডেমি থেকে ৫টিসহ মোট ২১টি খণ্ডে নজরুলের গানের স্বরলিপি গ্রন্থ বের করেছেন। সংগীতক্ষেত্রে অবদানের জন্য তাকে ১৯৮৮ সালে একুশে পদকে সম্মানিত করা হয়। সুধীন দাস ১৯৩০ সালের ২৯ এপ্রিল কুমিল্লা শহরের তালপুকুরের বাগিচাগাঁওয়ে জন্মগ্রহণ করেন। ছোটবেলা থেকেই তিনি বাউণ্ডুলে হলেও তবে লেখাপড়ায় মেধাবী ছিলেন। দাবা খেলাতেও তিনি পারদর্শী ছিলেন। সুধীন দাস কুমিল্লা জিলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করে ভর্তি হন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে। বড় ভাই সুরেন দাশের কাছেই তার সংগীতের হাতেখড়ি। তারই অনুপ্রেরণায় উচ্চাঙ্গ সংগীতে তালিম। ১৯৪৭ সালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে পড়ার সময় রেডিওতে অডিশন দেন সুধীন দাশ। ১৯৬৫ সাল থেকে যুক্ত হন টেলিভিশনের সঙ্গে । সুধীন দাস ১৯৪৮ সালে বেতারে নিয়মিতভাবে নজরুল সংগীত গাইতে শুরু করেন। বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের মৃত্যুর পর তিনি নজরুল সংগীতের শুদ্ধ স্বরলিপি প্রণয়নে মনোযোগী হন। তিনি নজরুল সংগীতের আদি গ্রামোফোন রেকর্ডের বাণী ও সুর অনুসারে স্বরলিপি গ্রন্থ লেখেন। ১৯৮২ সালে ২৫টি স্বরলিপি নিয়ে নজরুল সুরলিপির প্রথম খণ্ডটি প্রকাশ করে নজরুল একাডেমি। পরে নজরুল ইনস্টিটিউট থেকে বের হয় আরও ৩৩টি খণ্ড। বাংলাদেশের প্রায় সব সংগীত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত ছিলেন সুধীন দাশ। তিনি নজরুল ইনস্টিটিউট ও নজরুল একাডেমির সংগীত প্রশিক্ষক পদে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স-মাস্টার্স পরীক্ষার পরীক্ষক, বেতার-টেলিভিশনের গ্রেডেশন বোর্ডের প্রধান বিচারক, বাংলা, স্বরলিপি প্রমাণীকরণ পরিষদের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। সংগীতে অবদানের জন্য তিনি শহিদ আলতাফ মাহমুদ স্মৃতি স্বর্ণপদক, নাসির উদ্দীন স্বর্ণপদক একুশে পদকসহ বহু সম্মাননা পদক লাভ করেন। ২০১৭ সালের ২৭ জুন তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
কাজী সালমা সুলতানা