অগ্নিযুগের বিপ্লবী, রাজনীতিবিদ ও লেখক পূর্ণেন্দু দস্তিদার। তিনি ১৯০৯ সালের ২০ জুন চট্টগ্রাম জেলার পটিয়া থানার ধলঘাট গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা চন্দ্র কুমার দস্তিদার চট্টগ্রাম আদালতের কর্মকর্তা ছিলেন। পূর্ণেন্দু চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল থেকে ১৯২৫ সালে এন্ট্রান্স ও ১৯২৭ সালে চট্টগ্রাম কলেজ থেকে আইএসসি পাস করেন। যাদবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তি হলেও সূর্যসেনের সহযোগী হিসেবে তিনি কলকাতায় গ্রেপ্তার হন এবং ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া ত্যাগ করেন। জেলে বন্দি থাকাবস্থায় ১৯৩৪ সালে তিনি ডিস্টিংশনসহ বিএ পাস করেন এবং পরে বিএল ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৪০ সালে জেল থেকে মুক্তি লাভের পর তিনি চট্টগ্রাম আদালতে আইন ব্যবসা শুরু করেন। ছাত্রাবস্থায় পূর্ণেন্দু ব্রিটিশবিরোধী রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। মাস্টারদা সূর্য সেনের নেতৃত্বে চট্টগ্রাম যুববিদ্রোহে যোগদান করেন বিপ্লবী পূর্ণেন্দু দস্তিদারে। ১৯৩০ সালের ১৮ এপ্রিল চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন অভিযানে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন এবং ধরা পড়ে দীর্ঘদিন কারাগারে আটক থাকেন। জেলে বন্দি অবস্থায় তিনি ১৯৩৪ সালে ডিস্টিংশনসহ বিএ ও বিএল ডিগ্রি লাভ করেন। জেল থেকে মুক্ত হয়ে কিছুদিন আইন পেশায় নিয়োজিত হন ও ভারতের কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দেন। দেশভাগ হওয়ার পর তিনি সংসদীয় রাজনীতিতে অংশ নেন ও পূর্ববঙ্গ বিধানসভার সদস্য হন। ১৯৪৮ সালে পূর্ব পাকিস্তানে সামরিক আইন জারি হলে, তিনি আবার আটক হন। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে পূর্ববঙ্গ পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৫৫ সালে পূর্ববঙ্গ আইন সভায় তিনি চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহের স্মারক স্তম্ভ নির্মাণের প্রস্তাব উত্থাপন করেন এবং ১৯৫৬ সালে তা ব্যবস্থাপক সভায় তা গৃহীত হয়। ১৯৫৮ সালে পাকিস্তানে সামরিক শাসন জারির পর তিনি আবারও গ্রেপ্তার হন এবং ১৯৬২ সালে মুক্তি লাভ করেন। একই বছরে তিনি ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির চট্টগ্রাম শহর কমিটির সভাপতি হন। ১৯৬৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সংঘটিত ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় তাকে পুনরায় গ্রেপ্তার করা হয়। ১৯৬৯ সালে গণ-আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে তিনি মুক্তি লাভ করেন এবং ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিতে অংশগ্রহণ করেন। পূর্ণেন্দু দস্তিদার বেশ কিছু সাহিত্যকর্ম রচনা করেন। তার মধ্যেÑকবিয়াল রমেশ শীল, স্বাধীনতা সংগ্রামে চট্টগ্রাম, বীরকন্যা প্রীতিলতা উল্লেখযোগ্য। অনুবাদ করেন শেকভের গল্প, মোপাশাঁর গল্প। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য ভারত অভিমুখে তিনি রওনা দেন। পথিমধ্যে ৯ মে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
কাজী সালমা সুলতানা