Print Date & Time : 6 September 2025 Saturday 2:25 pm

স্মরণীয়-বরণীয়

বাংলাদেশে নারী সাংবাদিকতার অগ্রদূত ও সাহিত্যিক নূরজাহান বেগম। বাংলাদেশের সাংবাদিকতায় নারীর প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ করেছিল তার হাত ধরে। তিনি ভারত উপমহাদেশে নারীদের জন্য প্রথম একটি সচিত্র সাপ্তাহিক পত্রিকা ‘বেগম’ প্রকাশ করেন। পত্রিকাটির সূচনালগ্ন থেকে এর সম্পাদনার কাজে তিনি জড়িত ছিলেন এবং ছয় দশক ধরে বেগম পত্রিকার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। নূরজাহান বেগম ১৯২৫ সালের ৪ জুন চাঁদপুর জেলার চালিতাতলী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন ছিলেন প্রখ্যাত সাংবাদিক ও বিখ্যাত সওগাত পত্রিকার সম্পাদক।  ১৯২৯ সালে  তিনি মা ও মামার সঙ্গে কলকাতায় তার বাবার কাছে চলে যান। সেখানে তারা সওগাত পত্রিকার দপ্তরের দোতলা বাড়িতে বসবাস শুরু করেন। নূরজাহান বেগম তার শিক্ষাজীবন শুরু করেন বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত প্রতিষ্ঠিত সাখাওয়াত মেমোরিয়াল বিদ্যালয় থেকে। এই প্রতিষ্ঠান থেকে ১৯৪২ সালে তিনি মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। এরপর তিনি কলকাতার লেডি ব্রেবোর্ন কলেজ থেকে ১৯৪৪ সালে উচ্চ মাধ্যমিক এবং ১৯৪৬ সালে বিএ ডিগ্রি লাভ করেন। নূরজাহান বেগম বিএ শ্রেণিতে পড়াকালে ১৯৪৭ সালের ২০ জুলাই বেগম পত্রিকার প্রকাশনা শুরু হয়। সে সময় তার বাবা মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন প্রতিষ্ঠিত বেগম পত্রিকার প্রথম সম্পাদক ছিলেন সুফিয়া কামাল, নূরজাহান বেগম ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সুফিয়া কামাল প্রথম চার মাস সম্পাদক হিসেবে বেগম পত্রিকার দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ছয় দশক ধরে নূরজাহান বেগম ‘বেগম’ পত্রিকার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বিয়ে করেন রোকনুজ্জামান খানকে (দাদা ভাই)। ১৯৫০ সালে তারা বাংলাদেশে চলে আসেন। ১৯৫৪ সালের ১৫ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে ‘বেগম ক্লাব’ প্রতিষ্ঠিত হলে তার সেক্রেটারি হন নূরজাহান বেগম। পত্রিকার বাইরে তিনি আপওয়া, জোনটা ইন্টারন্যাশনাল, বাংলাদেশ শিশুকল্যাণ পরিষদ, মহিলা পরিষদ, বাংলাদেশ লেখিকা সংঘ প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানের সদস্য হিসেবে সমাজসেবায় ভ‚মিকা রাখেন। ১৯৯৬ সালে নূরজাহান বেগম শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব হিসেবে নন্দিনী সাহিত্য ও পাঠচক্রের সম্মাননা লাভ করেন। ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক রোকেয়া পদক ছাড়াও বহু সংগঠন থেকে সম্মাননা ও স্বর্ণপদক অর্জন করেন। ২০১০ সালে পত্রিকাশিল্পে তার অবদানের জন্য আন্তর্জাতিক নারী সংগঠন ইনার হুইল ডিস্ট্রিক্ট ৩২৮ সম্মাননা পান তিনি। তিনি ২০১৬ সালের ২৩ মে মৃত্যুবরণ করেন।

কাজী সালমা সুলতানা