স্মরণীয়-বরণীয়

কবি, সাহিত্যিক, গল্পকার, বিপ্লবী চিন্তাবিদ নবারুণ ভট্টাচার্যের আজ ৭৪তম জন্মবার্ষিকী। তিনি ছিলেন বাংলা সাহিত্যের একজন বিপ্লবী সাম্যবাদী ধারার কবি ও কথাসাহিত্যিক। তরুণ প্রজন্মের কাছে ‘ফ্যাতাড়ু’ স্রষ্টা হিসেবে ব্যাপক জনপ্রিয় ছিলেন। তিনি বাংলা সাহিত্যের দিকপাল ও মানবাধিকার আন্দোলন কর্মী মহাশ্বেতা দেবী এবং নাট্যকার বিজন ভট্টাচার্যের একমাত্র পুত্র। 

নবারুণ ভট্টাচার্য ১৯৪৮ সালের ২৩ জুন পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার বহরমপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি আশুতোষ কলেজে ভূতত্ত্ব ও সিটি কলেজ থেকে ইংরেজি সাহিত্যে শিক্ষা গ্রহণ করেন।

নবারুণ ভট্টাচার্য কলেজের লেখাপড়া শেষ করে তিনি ‘সোভিয়েত দেশ’ পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত হন এবং দীর্ঘদিন এ পত্রিকার সঙ্গে কাজ করেন। একমাত্র সাহিত্য-সাধনাই ছিল তার কর্মজীবন। নবারুণ ভট্টাচার্য সাহিত্যবিষয়ক ম্যাগাজিন ‘সাহিত্যপত্র’ সম্পাদনা করেছেন। কিছুদিন বিষ্ণুদের ‘সাহিত্যপত্র’ সম্পাদনা করেন এবং ২০০৩ থেকে ‘ভাষাবন্ধন’ নামের একটি পত্রিকা পরিচালনা করেন। দীর্ঘদিন ‘নবান্ন’ নাট্যগোষ্ঠী পরিচালনা করেছেন। নাটক করেছেন মঞ্চে। উপন্যাস লেখার পাশাপাশি কবিতাও লিখেছেন। ১৯৬৮ সালে ‘পরিচয়’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয় তার প্রথম ছোটগল্প ‘ভাষণ’। ১৯৭২ সালে ‘এ মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ না’ নামে তার প্রথম কবিতার বই প্রকাশিত হয়। নবারুণ ভট্টাচার্যের প্রথম উপন্যাস ‘হারবার্ট’ প্রকাশিত হয় ১৯৯২ সালে। এই উপন্যাসটির পটভূমি ছিল ৭০ দশকের নকশাল আন্দোলন। লুব্ধক, ‘খেলনানগর’, ‘হালালঝান্ডা ও অন্যান্য’, ‘মহাজনের আয়না’, ‘ফ্যাতাড়–’, ‘হারবার্ট’ বা ‘কাঙাল মালসাটে’র মতো উপন্যাস রচনা করে নবারুণ ভট্টাচার্য তার এক ধরনের প্রতিষ্ঠানবিরোধী পরিচিতি তৈরি করেন। তার উপন্যাসের মূল বিষয় ছিল জীবন ঘনিষ্ঠতা ও জনসংগ্রাম তরুণ প্রজšে§র কাছে ফ্যাতাড়–র স্রষ্টা হয়ে নবারুণ ব্যাপক জনপ্রিয় হন। লিখেছেন ‘ফ্যাতাড়–র কুম্ভীপাক’, ‘ফ্যাতাড়ুর বোম্বাচাক’, ‘ফ্যাতাড়ু বিংশতি’ গল্পমালা। ‘ফ্যাৎ ফ্যাৎ সাঁই সাঁই’-এর মতো শব্দবন্ধ অনেকেরই মুখে মুখে ঘোরে। ‘হারবার্ট’ উপন্যাসের জন্য তিনি সাহিত্য আকাদেমি (১৯৯৭) পুরস্কার লাভ করেন। এই উপন্যাসকে ভিত্তি করে নাটক ও সিনেমাও নির্মিত হয়েছে। তিনি ২০১৪ সালের ৩১ জুলাই মৃত্যুবরণ করেন।

কাজী সালমা সুলতানা