স্মরণীয়-বরণীয়

শিক্ষাবিদ, পদার্থবিদ ও বিজ্ঞানী আবদুল মতিন চৌধুরীর ৪১তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪তম উপাচার্য ছিলেন। আবদুল মতিন চৌধুরী ১৯২১ সালের ১ মে লক্ষ্মীপুর জেলার নন্দনপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি নোয়াখালীর অরুণচন্দ্র হাইস্কুল থেকে ১৯৩৭ সালে প্রবেশিকা, ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট কলেজ থেকে ১৯৩৯ সালে আইএসসি,  তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিজ্ঞানে প্রথম শ্রেণিসহ বিএসসি (সম্মান) ডিগ্রি (১৯৪২) এবং একই শাস্ত্রে থিসিস গ্রুপে প্রথম শ্রেণিসহ এমএসসি ডিগ্রি (১৯৪৩) অর্জন করেন। তার গবেষণা তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন অধ্যাপক এবং খ্যাতনামা পদার্থবিজ্ঞানী প্রফেসর সত্যেন্দ্রনাথ বসু। আবদুল মতিন চৌধুরী ১৯৪৯ সালে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বায়ুমণ্ডলীয় পদার্থবিজ্ঞানে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৪৭-এর দেশ ভাগের আগেই তিনি সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত হন। ‘ইউনাইটেড প্রেস অব ইন্ডিয়া’র ঢাকা প্রতিনিধি ছিলেন তিনি। ১৯৪৯ সালে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৬১ সালে তিনি দ্বিতীয় ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন। আবদুল মতিন চৌধুরী কর্মজীবন শুরু করেন পাকিস্তানের আবহাওয়া অধিদপ্তরে আবহাওয়াবিদ হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৫০-এ তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে রিডার নিযুক্ত হন। আব্দুল মতিন চৌধুরী ১৯৬২ সাল থেকে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এবং পরে বিভাগীয় প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৬৭-১৯৭০ সাল পর্যন্ত পাকিস্তান পারমাণবিক শক্তি কমিশনের সদস্য, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের চিফ সায়েন্টিস্ট এবং ১৯৭০-১৯৭১ সাল পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার নির্বাচনী কমিটির এশীয় অঞ্চলের সদস্য, নেহরু শান্তি পুরস্কার নির্বাচনী কমিটির সদস্যসহ অনেক সম্মানসূচক পদ অলঙ্কৃত করেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিনি পাকিস্তানে আটক জীবনযাপন করেন। স্বাধীনতার পর পাকিস্তান থেকে দেশে প্রত্যাবর্তন করেন। ১৯৭৩ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিযুক্ত হন। ১৯৭৬ সালে তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের উলকসন কলেজ থেকে ভিজিটিং ফেলোশিপ লাভ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে বিভাগীয় প্রাক্তন অধ্যাপক ও আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন পদার্থবিজ্ঞানী সত্যেন বোসের নামে চেয়ার প্রতিষ্ঠার পর অধ্যাপক আবদুল মতিন চৌধুরী সম্মানসূচক ‘বোস অধ্যাপক’ পদ লাভ করেন। এই কৃতি বিজ্ঞানী ১৯৮১ সালের ২৪ জুন মৃত্যুবরণ করেন। শিক্ষাক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি ‘স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার-১৯৯৭’তে (মরণোত্তর) ভূষিত হন।

কাজী সালমা সুলতানা