স্মরণীয়-বরণীয়

ছন্দের জাদুকর কবি ও ছড়াকার সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের আজ শততম মৃত্যুবার্ষিকী। রবীন্দ্রোত্তর সমকালীন কবিদের মধ্যে তিনি জনপ্রিয়তম কবি। তিনি তার শব্দের ঝংকারে, ছন্দেও লালিত্য ও মার্জিত রুচির ঐতিহ্যে তার কাব্যেও একটি স্বতন্ত্র পরিমণ্ডল গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছিলেন। তার কবিতায় ছন্দের অপূর্ব কলা-কৌশলে মুগ্ধ হয়ে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাকে ছন্দের জাদুকর আখ্যায় ভূষিত করেন। সাহিত্য চর্চা ছাড়াও তিনি মধ্যযুগে ভারতের ইতিহাস, সংস্কৃতি, পৌরাণিক প্রভৃতি বুদ্ধিবৃত্তিবিষয়ক বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধহস্তের অধিকারী ছিলেন। সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত ১৮৮২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি পশ্চিম বঙ্গের চব্বিশ পরগনা জেলার নিমতা গ্রামে এক সাংস্কৃতিমনা ও সুশিক্ষিত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতামহ অক্ষয় কুমার দত্ত ছিলেন তত্ত্ববোধিনী পত্রিকার সম্পাদক। শৈশব থেকেই তিনি ছিলেন পাঠানুরাগী। তবে পাঠ্যবহির্ভূত বই পড়তেই তিনি বেশি উৎসাহী ছিলেন। তিনি কলকাতার সেন্ট্রাল কলেজিয়েট স্কুল থেকে এন্ট্রান্স (১৮৯৯) এবং জেনারেল অ্যাসেমব্লিজ ইনস্টিটিউশন (বর্তমান স্কটিশ চার্চ কলেজ) থেকে এফএ (১৯০১) পাস করেন। কিন্তু পরে বিএ পরীক্ষায় তিনি অকৃতকার্য হন। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা বন্ধ হলেও বই পড়ার প্রচণ্ড নেশায় তিনি পড়ার জগতে ব্যস্ত থাকেন। ১৯০০ সালে  দশম শ্রেণির ছাত্র থাকাকালীন সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘সবিতা’ প্রকাশিত হয়। ১৯১২ সালে রচনা করেন প্রথম উপন্যাস ‘জš§দুঃখী’। তিনি নবকুমার, কবিরত্ন, অশীতিপর শর্মা, ত্রিবিক্রম বর্মণ, কলমগীর প্রভৃতি ছদ্মনামে কবিতা লিখেছেন। বাংলা ভাষার নিজস্ব বাগধারা ও ধ্বনি সহযোগে নতুন ছন্দসৃষ্টি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের কবিপ্রতিভার মৌলিক কীর্তি। বাংলা শব্দের সঙ্গে আরবি-ফার্সি শব্দের সমন্বিত ব্যবহার দ্বারা বাংলা কাব্যভাষার শক্তি বৃদ্ধি করেন। তার অপর কৃতিত্ব বিদেশি কবিতার সফল অনুবাদ। তার কাব্যরচনার বিষয় ছিল দেশাত্মবোধ, মানবপ্রীতি, ঐতিহ্যচেতনা, শক্তিসাধনা প্রভৃতি। তিনি ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের বিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের কাব্যগ্রন্থের সংখ্যা ষোলটি। তার উল্লেখযোগ্য রচনাবলিÑসবিতা, সন্ধিক্ষণ, বেণু ও বীণা, হোম শিখা, ফুলের ফসল, কুহু ও কেকা, তুলির লিখন, অভ্র-আবির, কাব্যসঞ্চয়ন, শিশু-কবিতা  প্রভৃতি। তার অনুবাদকৃত কাব্যÑতীর্থরেণু, তীর্থ-সলিল, মণিমঞ্জুষা এবং গদ্যরচনা জন্মদুঃখী (উপন্যাস), চীনের ধূপ (প্রবন্ধ), ছন্দ-সরস্বতী (প্রবন্ধ), রঙ্গমল্লী (নাট্যানুবাদ) প্রভৃতি। তিনি ১৯২২ সালের ২৫ জুন মৃত্যুবরণ করেন।

কাজী সালমা সুলতানা