স্মরণীয়-বরণীয়

অগ্নিযুগের বিপ্লবী, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের যোদ্ধা দীনেশচন্দ্র গুপ্ত। তিনি এলাকায় ‘নসু’ নামে সমধিক পরিচিত ছিলেন। ঢাকা ও মেদিনীপুরে ব্রিটিশবিরোধী বিপ্লবী সংগঠন গড়ে তোলেন তিনি। দীনেশ গুপ্ত ১৯১১ সালের ৬ ডিসেম্বর বর্তমান বিক্রমপুর জেলার যশোলং গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। নয় বছর বয়সে তিনি ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলে ভর্তি হন। দীনেশ বাল্যকাল থেকেই নির্ভীক, বেপরোয়া ও বাগ্মী  হয়ে ওঠেন। সে সময় থেকেই তার মনে স্বদেশ চেতনা ও ব্রিটিশ বিরোধিতার আদর্শ সঞ্চারিত হয়। কৈশোরে তিনি বেঙ্গল ভলেন্টিয়ার্স (বিভি) নামে একটি গুপ্ত বিপ্লবী সংগঠনের সদস্য হন। ১৯২৬ সালে তিনি ঢাকা বোর্ড থেকে ম্যাট্রিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন।  কলেজে পড়ার সময় ১৯২৮ সালে  তিনি নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বোস সংগঠিত বিপ্লবী সংগঠন ‘বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্সে’ যোগদান করেন। তিনি এই বাহিনীর সাধারণ সদস্য থেকে ক্যাপ্টেন পদে উন্নীত হন। পরে ঢাকা ও মেদিনীপুরে তিনি বিপ্লবী সংগঠন গড়ে তোলেন। দীনেশচন্দ্র গুপ্ত ও তার সহযোগীরা  পশ্চিমবাংলার মেদিনীপুরে ব্রিটিশ সরকারের সহযোগী তিনজন জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে পরপর হত্যা করে। এরপর ১৯৩০ সালের ৮ ডিসেম্বর বিনয় বসুর নেতৃত্বে বাদলগুপ্ত ও দীনেশচন্দ্র কলকাতা রাইটার্স বিল্ডিং-এ আক্রমণ চালিয়ে কারা বিভাগের অত্যাচারী ইন্সপেক্টর-জেনারেল সিম্পসনকে হত্যা ও কয়েকজন উচ্চপদস্থ ইউরোপীয় কর্মচারীকে গুরুতরভাবে আহত করেন। এ ঘটনায় গ্রেপ্তার এড়ানোর উদ্দেশ্যে এ বিপ্লবীত্রয় বিষপানে ও নিজেদের মাথায় গুলি চালিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। এতে বিনয় ও বাদলের মৃত্যু হয়, গুরুতর আহত দীনেশ বেঁচে ওঠে। দীনেশের দেশপ্রেম এতই গভীর ছিল যে, বহু চেষ্টা করেও ব্রিটিশ সরকার তার কাছ থেকে কোনো স্বীকারোক্তি আদায় করতে ব্যর্থ হয়। অবশেষে সরকারবিরোধী কার্যকলাপ এবং হত্যার অভিযোগে বিচারে তার ফাঁসির আদেশ হয়। নির্ভীক দীনেশ ফাঁসির প্রতীক্ষায় থাকাকালীন সময়ে কারান্তরালে বসে কয়েকটি মূল্যবান পত্র লেখেন, যাতে বিপ্লবীদের বীরত্বগাথা, আত্মত্যাগের মহিমা এবং গভীর দেশপ্রেমে ভরা । ১৯৩১ সালের ৭ জুলাই মাত্র ১৯ বছর বয়সে তার ফাঁসি কার্যকর করা হয়। পরবর্তীকালে কলকাতার ডালহৌসি স্কয়ারের নাম পালটে বিনয়-বাদল-দীনেশ এ তিন নবীন বীরের স্মরণে উৎসর্গ করা হয়, যা সংক্ষেপে ‘বি-বা-দী বাগ’ নামে পরিচিত।

কাজী সালমা সুলতানা