স্মরণীয়-বরণীয়

বিশিষ্ট নাট্যকার, নাট্যনির্দেশক, নাট্যশিক্ষক, সংগঠক, চলচ্চিত্র পরিচালক ও অভিনেতা আবদুল্লাহ আল মামুনের ৮১তম জন্মবার্ষিকী আজ। তিনি ১৯৪২ সালের ১৩ জুলাই জামালপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি নাটক রচনা, নির্দেশনা ও অভিনয়ের সঙ্গে যুক্ত হন। নাট্যসংগঠন ‘থিয়েটার’-এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য তিনি। আবদুল্লাহ আল মামুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগ থেকে বিএ (সম্মান), এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন। আবদুল্লাহ আল মামুন বাংলাদেশ টেলিভিশনের প্রযোজক হিসেবে পেশাগত জীবন শুরু করেন। বাংলাদেশ টেলিভিশনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন ছাড়াও তিনি জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীকালে পরিচালক হিসেবে ফিল্ম ও ভিডিও ইউনিটে এবং মহাপরিচালক হিসেবে শিল্পকলা একাডেমিতে দায়িত্ব পালন করেন। যুদ্ধবিরোধী চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে আবদুল্লাহ আল মামুন ১৯৬৪ সালে ‘শপথ’ নামে নাটক রচনা করেন। এরপর একের পর এক নাটক রচনা, নির্দেশনা আর অভিনয়ের সফল সিঁড়ি বেয়ে তার এগিয়ে যাওয়া। বাংলাদেশের মঞ্চনাটকের ইতিহাসে তিনি বড় অবদান রাখেন সৈয়দ শামসুল হক রচিত ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’ কাব্যনাটকে নির্দেশনা ও অভিনয় করে। ১৯৭৬ সালে মঞ্চস্থ এ নাটকটি স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম মৌলিক কাব্যনাট্যের প্রযোজনা হিসেবে বিবেচিত। আব্দুল্লাহ আল মামুন রচিত গ্রন্থাকারে প্রকাশিত ও মঞ্চস্থ নাটকের সংখ্যা ২৫টি। এর মধ্যে ‘সুবচন নির্বাসনে’, ‘এখনও দুঃসময়’, ‘সেনাপতি’, ‘শাহজাদীর কালো নেকাব’, ‘আয়নায় বন্ধুর মুখ’, ‘এখনও ক্রীতদাস’, ‘কোকিলারা’, পথনাটক- ‘উজান পাবন’, ‘বিবিসাব ও কুরসী’, ‘মেরাজ ফকিরের মা’ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। আবদুল্লাহ আল মামুনই বাংলাদেশে টেলিভিশনে প্রথম ধারাবাহিক নাটক পরিচালনা করেন। তার উল্লেখযোগ্য ধারাবাহিক নাটক ‘সংশপ্তক’, ‘আমি তুমি সে’, ‘পাথর সময়’, জোয়ার ভাটা’, ‘বাবা, শীর্ষবিন্দু’, ‘উত্তরাধিকার’ প্রভৃতি। আবদুল্লাহ আল মামুন চলচ্চিত্রও নির্মাণের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ‘সারেং বউ’ তার বিখ্যাত ও দর্শকপ্রিয় চলচ্চিত্র। নাটক ছাড়াও আবদুল্লাহ আল মামুনের তিনটি গ্রন্থ রয়েছে। এর মধ্যে একটি আত্মচরিত এবং ‘ম্যানহাটান’ নামে একটি ভ্রমণকাহিনি ও ‘অভিনয়’ (প্রথম খণ্ড) নামে একটি শিক্ষামূলক গ্রন্থ। নাট্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ আবদুল্লাহ আল মামুন বাংলা একাডেমি পুরস্কার ও একুশে পদক লাভ করেন। এছাড়া চলচ্চিত্র নির্মাণের স্বীকৃতিস্বরূপ দুইবার শ্রেষ্ঠ পরিচালক ও চিত্রনাট্যকার হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। তিনি ২০০৮ সালের ২১ আগস্ট মৃত্যুবরণ করেন।

কাজী সালমা সুলতানা