স্মরণীয়-বরণীয়

বীর উত্তম শহীদ ক্যাপ্টেন সালাউদ্দিন মমতাজের ৫০তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে ‘বীর উত্তম’ উপাধিতে ভূষিত করে। ক্যাপ্টেন সালাউদ্দিন মমতাজ তিনি ১৯৪৫ সালের ১২ জুলাই ফেনীর চাড়িপুর গ্রামের মোক্তারবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ফেনী সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মেট্রিক ও ফেনী কলেজ থেকে আইএসসি পাস করেন। একই কলেজে বিএসসি অধ্যয়নকালে ১৯৬৬ সালে ফ্লাইট ক্যাডেট হিসেবে পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে যোগ দেন। পরে তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে তিনি পশ্চিম পাকিস্তানে কর্মরত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ক্যাপ্টেন সালাউদ্দিন পাঁচ বাঙালি সেনা কর্মকর্তা একাত্তরের ১ জুলাই পাকিস্তান সেনানিবাস থেকে পালিয়ে শিয়ালকোটের মারালা সীমান্তের খরোস্রোতা মুনাওয়ার তাবি নদী অতিক্রম করে ৩ জুলাই ভারতে প্রবেশ করেন। সেখানে তারা প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের আনুগত্য স্বীকার করে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। বাংলাদেশকে স্বাধীনতার যুদ্ধে যোগদানের জন্য সালাউদ্দিন ১১নং সেক্টরের প্রথম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে যোগদান করেন। সে সময় ভারতের মেঘালয় রাজ্যের তেলঢালা ক্যাম্পে এই রেজিমেন্টের অধীনে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ চলছিল। এখানে পরে জেড ফোর্স গঠিত হলে সালাউদ্দিনকে এই ফোর্সে নিযুক্ত করা হয়। প্রশিক্ষণ শেষ হলে জেড ফোর্সের অধিনায়ক মেজর জিয়া ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের মাধ্যমে কামালপুর বিওপি আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেন। তিনি সালাহউদ্দিনকে ‘চার্লি’ কোম্পানির কমান্ডার নিযুক্ত করেন। তার সাহসিকতার জন্য  সহযোদ্ধারা তাকে ‘রিয়েল টাইগার’ নামে ডাকত। ২৮ জুলাই কামালপুর যুদ্ধের প্রস্তুতি ও ৩১ জুলাই রাত ৩টার দিকে কামানের গোলা বর্ষণের মাধ্যমে যুদ্ধ শুরু হয়। সেদিন রাত সাড়ে ৩টায় ক্যাপ্টেন সালাহউদ্দিন মমতাজ তার ২ প্লাটুন সৈন্য নিয়ে শত্রুঘাঁটিতে ঢুকে পড়েন। যুদ্ধে ক্যাপ্টেন সালাউদ্দিন মমতাজ অসামান্য নেতৃত্বের পরিচয় দেন। তিনি একসময় বুঝতে পারেন যে, পাকিস্তানি সেনারা পিছিয়ে গিয়ে পুনরায় কাউন্টার অ্যাটাকের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তিনিও সহযোদ্ধাদের নিয়ে প্রস্তুত হন। কিন্তু যুদ্ধ চলাকালে একপর্যায়ে পাকিস্তানিদের গোলার আঘাতে নিহত হন ক্যাপ্টেন সালাউদ্দিন। তীব্র যুদ্ধের কারণে সেদিন শহীদ ক্যাপ্টেন সালাউদ্দিন মমতাজের দেহ উদ্ধার করা যায়নি।

কাজী সালমা সুলতানা