গুণী চিত্রশিল্পী মুস্তফা মনোয়ারের ৮৭তম জন্মবার্ষিকী আজ। তিনি একজন চিত্রশিল্পী, ভাস্কর, রেডিও অভিনেতা এবং চারুকলার অধ্যাপক। দ্বিতীয় সাফ গেমসের মিশুক নির্মাণ এবং ঢাকার কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারের পেছনের লালরঙের সূর্যের প্রতিরূপ তার উদ্ভাবনী প্রতিভার স্বাক্ষর। শিল্পী মুস্তফা মনোয়ার ১৯৩৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর বর্তমান মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার নাকোল গ্রামে জš§গ্রহণ করেন। তার পৈতৃক নিবাস ঝিনাইদহের শৈলকূপা উপজেলার মনোহরপুর গ্রামে। কলকাতার শিশু বিদ্যাপীঠে তার শিক্ষাজীবনের শুরু। পরবর্তী সময় নারায়ণগঞ্জ গভর্নমেন্ট স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। ১৯৫৯ সালে কলকাতা চারু ও কারুকলা মহাবিদ্যালয় থেকে ফাইন আর্টসে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হন তিনি। নারায়ণগঞ্জ স্কুলে নবম শ্রেণিতে পড়াকালীন তিনি বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে ছবি আঁকতে শুরু করেন এবং সেই ছবি বন্ধুদের সঙ্গে সারা নারায়ণগঞ্জ শহরের দেয়ালে দেয়ালে সেঁটে দেন। যার ফলে পাকিস্তান পুলিশ তাকে বন্দি করে ও ঢাকা সেন্ট্রাল কারাগারে আটক রাখে। আর্ট কলেজে তৃতীয় বর্ষের ছাত্র থাকাকালে মুস্তফা মনোয়ার একাডেমি অব ফাইন আর্টস আয়োজিত সর্বভারতীয় চিত্র প্রদর্শনীতে গ্রাফিক্স আর্টস এ স্বর্ণপদক লাভ করেন। তার এই সুসংবাদে ঢাকা আর্টস কলেজের প্রতিষ্ঠাতা শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন তাকে ঢাকা আর্টস কলেজে শিক্ষকতা করার জন্য আমন্ত্রণ জানান। তিনি ১৯৬১ থেকে ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত ঢাকা আর্টস কলেজে শিক্ষকতা করেন। ১৯৬৪ সালে তিনি টেলিভিশনের স্টেশন প্রডিউসার হিসেবে যোগ দেন; পরবর্তী সময়ে তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশনের উপমহাপরিচালক, শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক, জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক, বাংলাদেশ টেলিভিশন, শিশু একাডেমি, ঢাকা’র জেনারেল ম্যানেজার এবং এফডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে তিনি দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া তিনি জনবিভাগ উন্নয়ন কেন্দ্রীয় চেয়ারম্যান এবং এডুকেশনাল পাপেট ডেভেলপমেন্ট সেন্টারের প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন। মুস্তফা মনোয়ার বিটিভি থেকে প্রচারিত ‘নতুন কুঁড়ি ও বাংলাদেশে পাপেট তৈরি ও কাহিনি সংবলিত পাপেট প্রদর্শনের মূল উদ্যোক্তা, তৈরি করেন নাটক ‘রক্তকরবী’। একাত্তরে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি সংগঠিত পুতুল শো করেন পশ্চিমবঙ্গের শরণার্থী শিবিরে। তিনি ‘বাংলাদেশের পুতুলম্যান’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। মুস্তফা মনোয়ার ২০০৪ সালে একুশে পদকসহ দেশে-বিদেশে অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা অর্জন করেন।
কাজী সালমা সুলতানা