স্মরণীয়-বরণীয়

বিখ্যাত সুরকার ও সংগীত পরিচালক সমর দাসের ২১তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি ‘পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে’, ‘নোঙ্গর তোলো তোলো’, ‘ভেব না গো মা তোমার ছেলেরা’এমন অনেক জাগরণী গানের উদ্ভাবক। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে তার রচিত এমন অনেক গান এদেশের মুক্তিকামী মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে বিবিসি থেকে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতের অক্রেস্ট্রেশন রেকর্ড করে আনেন তিনি। বাংলাদেশ বেতারের সিগনেচার টিউন বা সূচনা সংগীত তারই কম্পোজ করা। সমর দাস ১৯২৫ সালের ১০ ডিসেম্বর ঢাকার লক্ষ্মীবাজারে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশবে পরিবারেই তার সংগীত শিক্ষার হাতেখড়ি। ১৯৪৫ সালে তদানীন্তন অল ইন্ডিয়া রেডিওর ঢাকা কেন্দ্রে বাঁশি বাজানোর মধ্য দিয়ে তার সংগীতজীবনের সূচনা। তিনি বেহালাও বাজাতেন। তরুণ বয়সে চমৎকার গিটার ও পিয়ানো বাজানোর জন্য ভক্তরা তার নাম রেখেছিলেন ‘দ্য গোল্ডেন ফিঙ্গার’। সমর দাস পঞ্চাশের দশকে কলকাতায় হিজ মাস্টার্স ভয়েস কোম্পানিতে কাজ শুরু করেন। ১৯৬১ সালে ঢাকা বেতার কেন্দ্রে সংগীত পরিচালক হিসেবে যোগ দেন। এখানে তিনি স্বাধীনতার আগ পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি মুজিবনগর খেকে পরিচালিত স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অন্যতম সংগঠক ও প্রধান পরিচালক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বাংলাদেশে ‘সংগীত পরিষদ’-এর প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য ছিলেন। তিনি জাতীয় প্রেস ক্লাবেরও সদস্য ছিলেন। বাংলা চলচ্চিত্রের সংগীত পরিচালক হিসেবে সমর দাস খ্যাতি লাভ করেন। ১৯৭২ সালে কলকাতার এইচএমডি কোম্পানি বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের ২৬টি গানসংবলিত বাংলাদেশের ‘হƒদয় হতে’ (১৯৭২) নামে একটি লংপ্লে রেকর্ড প্রকাশ করে। এ রেকর্ডের সংগীত পরিচালক ছিলেন তিনি। ১৯৭৫ সালে বাংলা ছায়াছবি ‘ধীরে বহে মেঘনা’র সংগীত পরিচালনা করেন তিনি। বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের দুই হাজারেরও বেশি গানের সুরকার সমর দাস। ১৯৯৩ সালে তিনি রচনা করেন ঢাকায় সাফ গেমসের সূচনা ও সমাপনী সংগীত। বাংলাদেশের প্রথম ছায়াছবি ‘মুখ ও মুখোশ’-এর সংগীত পরিচালক তিনি। শিল্পকলা একাডেমিসহ আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে দায়িত্ব পালন করেন সমর দাস। তিনি তার কর্মজীবনে দেশে-বিদেশে বহু সম্মান পেয়েছেন। সংগীতে অবদানের জন্য ১৯৭৯ সালে তিনি স্বাধীনতা পদক লাভ করেন। পেয়েছেন একুশে পদকসহ অসংখ্য পদক ও সম্মাননা। ২০০১ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

কাজী সালমা সুলতানা