Print Date & Time : 10 September 2025 Wednesday 6:40 pm

স্মরণীয়-বরণীয়

ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী এক অকুতোভয় নারী মাতঙ্গিনী হাজরা। ব্রিটিশ অপশাসনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন পর্যায়ে তিনি নির্ভীক সংগ্রামীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। তিনি ঔপনিবেশিক শাসনের কবলমুক্তির সংগ্রামে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন এবং মহাত্মা গান্ধীর অহিংসমত অনুসরণ করেন।  মাতঙ্গিনী হাজরা ১৮৭০ সালের ১৯ অক্টোবর পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুরে জন্মগ্রহণ করেন। দরিদ্রতার কারণে বাল্যকালে তিনি প্রথাগত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হন । ১৯০৫ সালে তিনি স্বদেশি আন্দোলনের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হন। ১৯৩২ সালে গান্ধীর আইন অমান্য আন্দোলনে (লবণ সত্যাগ্রহ) অংশ নেন। এ সময় তিনি  গ্রেপ্তার হওয়ার পর শাস্তি হিসেবে তাকে দীর্ঘ পথ হেঁটে যেতে বাধ্য করা হয়। তিনি চৌকিদারি ট্যাক্স বন্ধ করে দেয়ার আন্দোলনেও অংশ নেন। ওই আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের শাস্তিদানের উদ্দেশ্যে ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক গঠিত আদালতের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে সেøাগান দিয়ে আদালত ভবনের দিকে যাওয়ার সময় তাকে আবার গ্রেপ্তার করা হয়। এবার তাকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দিয়ে বহরমপুর জেলে পাঠানো হয়। জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর মাতঙ্গিনী ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের কার্যাবলির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িয়ে  পড়েন। গান্ধীর সত্যিকার অনুসারীর মতো তিনি চরকায় সুতা কাটা ও খদ্দরের কাপড় বোনায় আত্মনিয়োগ করেন। সে সময় কলেরা, বসন্ত প্রভৃতি রোগের প্রকোপ ছিল বেশি। তিনি গ্রামে গ্রামে গিয়ে এসব রোগীর সেবাও করতেন। স্থানীয়দের কাছে তিনি পরিচিত ছিলেন ‘গান্ধীবুড়ি’ নামে। ব্রিটিশের ভারত ছাড় আন্দোলন (১৯৪২) চলাকালে ২৯ সেপ্টেম্বর মেদিনীপুরের জনগণ থানা, আদালত ও অন্যান্য সরকারি অফিস জোরপূর্বক দখল করার উদ্দেশ্যে আক্রমণের পরিকল্পনা করে। সেদিন ছয় হাজার স্বেচ্ছাসেবক সমর্থকের মিছিলের নেতৃত্ব দেন ৭৩ বছর বয়সী মাতঙ্গিনী হাজরা। মিছিলে পুলিশ গুলি চালালে তিনি অন্যদের পেছনে রেখে নিজেই এগিয়ে যান। নির্ভীক মাতঙ্গিনী সাধারণ জনগণের ওপর গুলি না চালানোর জন্য পুলিশের কাছে বারবার অনুরোধ জানান। তা সত্ত্বেও  ইংরেজ সৈন্যদল নির্বিচারে গুলি চালায়। পরপর দুটি বুলেট এসে বিদ্ধ করে তাকে। এ অবস্থায়ও তিনি বলেন, ‘ব্রিটিশের গোলামি ছেড়ে গুলি ছোড়া বন্ধ করোÑতোমরা সব আমাদের মতো স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে হাত মেলাও।’ এ সময় তৃতীয় বুলেট তার কপালে বিদ্ধ হলে মৃত্যুবরণ করেন তেজোদীপ্ত ও অসীম সাহসী মাতঙ্গিনী হাজরা।

কাজী সালমা সুলতানা