প্রখ্যাত প্রাবন্ধিক, গবেষক আবুল কাসেম ফজলুল হকের আজ ৭৮তম জন্মবার্ষিকী। তিনি ইতিহাসবেত্তা, অনুবাদক, সমাজবিশ্লেষক, সাহিত্য সমালোচক ও রাষ্ট্রচিন্তাবিদ হিসেবেও সুনাম অর্জন করেছেন। নিরপেক্ষ রাজনৈতিক চিন্তা ও তত্ত্বের জন্য তিনি বিশেষভাবে পরিচিত। তিনি রাষ্ট্রভাষা বাংলা রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন। ১৯৮১ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার অর্জন করেন তিনি। আবুল কাসেম ফজলুল হক ১৯৪৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৫৯ সালে ময়মনসিংহ জিলা স্কুল থেকে প্রবেশিকা ও ১৯৬১ সালে আনন্দ মোহন কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৫ সালে তিনি স্নাতক ও পরে স্নাতকোত্তর পাস করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালে তিনি মুনীর চৌধুরী, আহমদ শরীফ, হুমায়ুন আজাদ, নীলিমা ইব্রাহিমেরসহ প্রগতিশীল ব্যক্তিদের সংস্পর্শে এবং নিজেকে প্রগতিশীল ভাবধারায় যুক্ত করেন। আবুল কাসেম ফজলুল হক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে দীর্ঘ চার দশক শিক্ষকতা করেন। ১৯৮২ সাল থেকে তিনি সমাজসংস্কারের ধারায় ‘চার্বাক মতাবলম্বী’ লোকায়ত নামক একটি মননশীল পত্রিকা সম্পাদনা করছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের একজন অধ্যাপক এবং বাংলা বিভাগের সভাপতি হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেন। ফজলুল হক একুশটিরও অধিক গ্রন্থ রচনা করেছেন। তার রচিত গ্রন্থগুলোর মধ্যে মুক্তিসংগ্রাম, কালের যাত্রার ধ্বনি, একুশে ফেব্রুয়ারি আন্দোলন, উনিশ শতকের মধ্যশ্রেণি ও বাংলা সাহিত্য, নৈতিকতা: শ্রেয়নীতি ও দুর্নীতি, মানুষের স্বরূপ, রাষ্ট্রচিন্তায় বাংলাদেশ’, ‘রাজনীতি ও সংস্কৃতি: সম্ভাবনার নবদিগন্ত’ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। তিনি ‘মানুষ’ শিরোনামে একটি কবিতা লিখেছেন।
আবুল কাসেম ফজলুল হক নজরুল রচনাবলির সম্পাদনা পরিষদের সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। পত্রপত্রিকায় তিনি নিয়মিত কলাম লিখে থাকেন। ২০০০ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত তিনি স্বদেশ চিন্তা সংঘের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এ সংগঠনটি ২০০৫ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ‘বাংলাদেশের মুক্তি ও উন্নতির কর্মনীতি আটাশ দফা’ প্রচার করেছে তার রচয়িতা ছিলেন তিনি। দার্শনিক, শিক্ষক গবেষক আবুল কাসেম ফজলুল হককে দেশের মেহনতি মধ্যবিত্ত সাধারণ মানুষের প্রথম সারির রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব মনে করা হয়। তার একমাত্র সন্তানের নাম ফয়সল আরেফিন দীপন, যিনি জাগৃতি প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী ছিলেন। ২০১৫ সালের ৩১ অক্টোবর দীপনকে দুর্বৃত্তরা হত্যা করে।
কাজী সালমা সুলতানা