Print Date & Time : 17 July 2025 Thursday 6:38 pm

স্মরণীয়-বরণীয়

আধ্যাত্মিক বাউল সাধক, মানবতাবাদী, সমাজ সংস্কারক এবং দার্শনিক লালন শাহ। তিনি ছিলেন বাউল সাধনার প্রধান গুরু, বাউল গানের শ্রেষ্ঠ রচয়িতা ও গায়ক। ফকির লালন, লালন সাঁই, লালন শাহ, মহাত্মা লালন প্রভৃতি নামে তিনি পরিচিত। তিনি একজন মানবতাবাদী সাধক ছিলেন। লালনের গানের জন্য উনিশ শতকে তার বাউল গান জনপ্রিয়তা অর্জন করে। তার গানে মানব জীবনের আদর্শ, মানবতাবাদ ও অসাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ পেয়েছে। বহু খ্যাতনামা কবি, সাহিত্যিক, দার্শনিক, বুদ্ধিজীবীসহ অসংখ্য মানুষ তার গান ও দর্শন দ্বারা যুগে যুগে প্রভাবিত হয়েছে।

লালন শাহ ১৭৭৪ সালে বর্তমান ঝিনাইদহের হরিশপুর গ্রামে জš§গ্রহণ করেন। অন্যমতে কুষ্টিয়ার কুমারখালীর ভাঁড়রা গ্রামে তিনি জš§গ্রহণ করেন। তিনি যৌবনকালে তীর্থভ্রমণে বের হয়ে পথিমধ্যে বসন্ত রোগে আক্রান্ত হন। তখন সঙ্গীরা তাকে ছেড়ে চলে যায়। সিরাজ সাঁই নামে একজন ফকির তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় বাড়িতে নিয়ে সেবা দিয়ে সুস্থ করে তোলেন।  লালন তার কাছে বাউলধর্মে দীক্ষিত হন এবং ছেঁউড়িয়ায় একটি আখড়া নির্মাণ করে স্ত্রী ও শিষ্যসহ আজীবন সাধনা ও সংগীতচর্চা করেন। তার শিষ্যরা তাকে ‘সাঁই’ বলে সম্বোধন করতেন। লালনের কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছিল না। নিজ সাধনাবলে তিনি হিন্দু-মুসলমান উভয় ধর্ম সম্পর্কে গভীর জ্ঞান লাভ করেন। ফকির লালন আজীবন স্বপ্ন দেখতেন ধর্ম বর্ণ গোত্র জাতহীন এক মানবিক সমাজের, যে সমাজে মানুষই সব; মানুষের মানবিক মূল্যবোধই সমাজের সহায়ক। তিনি মানবতাকে সব জ্ঞানের ওপরে স্থান দিতে চেয়েছেন। লালন গভীরভাবে বিশ্বাস করতেন তার সেই পরম মনের মানুষের কোনো জাত কোনো বর্র্ণ বলে কিছু নেই। তাই তিনি গেয়েছেন, ‘সব লোকে কয় লালন কি জাত সংসারে/লালন কয় জাতির কি রূপ দেখলাম না এ নজরে।’ সাম্প্রদায়িক ভেদবুদ্ধি মুক্ত  সর্বজনীন ভাবরসে সিক্ত বলে লালনের গান হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের কাছে সমান জনপ্রিয়। লালন ধর্ম, বর্ণ, গোত্রসহ সব প্রকার জাতিগত বিভেদ থেকে সরে এসে মানবতাকে সর্বোচ্চ স্থান দিয়েছেন। আধ্যাত্মিক ভাবধারায় তিনি প্রায় দুহাজার গান রচনা করেন। লালনের লেখা গানের কোনো পাণ্ডুলিপি পাওয়া যায়নি। সম্ভবত পরবর্তীকালে শিষ্যদের কেউ সেগুলো সংগ্রহ ও সংকলিত করেন। ১৭ অক্টোবর ১৮৯০ ছেঁউড়িয়ায় লালন মৃত্যুবরণ করেন।

কাজী সালমা সুলতানা