Print Date & Time : 12 September 2025 Friday 3:29 am

স্মরণীয়-বরণীয়

ভাষাসৈনিক শহীদ রফিকউদ্দিন আহমদের ৯৬তম জন্মবার্ষিকী আজ। রফিকউদ্দিন ১৯২৬ সালের ৩০ অক্টোবর মানিকগঞ্জ জেলার সিংগাইর উপজেলার পারিল বলধারা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বর্তমানে গ্রামটি রফিক নগর নামে পরিচিত। শৈশবে গ্রামের স্কুলেই তিনি লেখাপড়া করেন। রফিক বাল্যকালে কিছুটা ডানপিটে ছিলেন। শৈশবে গাছ থেকে পড়ে হাত ভেঙে যাওয়ায় তিনি চিকিৎসার জন্য কলকাতা যান। সেখানে অবস্থানের সময় মিত্র ইনস্টিটিউশনে শিক্ষা লাভ করেন। ১৯৪৬ সালে কলকাতায় মহা দাঙ্গার পর রফিক দেশে ফিরে আসেন। ১৯৪৯ সালে তিনি স্থানীয় বায়রা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক সম্পন্ন করে মানিকগঞ্জ দেবেন্দ্র কলেজের বাণিজ্য বিভাগে ভর্তি হন। ১৯৫০ সালে দেবেন্দ্র কলেজ থেকে আইএ পরীক্ষা দেন। বাবার  মুদ্রণশিল্প ব্যবসা দেখাশোনার জন্য পরবর্তী সময়ে তিনি ঢাকায় চলে আসেন। পরে তিনি তৎকালীন জগন্নাথ কলেজে (বর্তমান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়) হিসাববিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন। এই কলেজে পড়ার সময়ে তিনি রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি তার নিজের বিয়ে উপলক্ষে গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তিনি যখন শুনতে পেলেন বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনে থেকে মিছিল বের হবে, তখন তিনি ছুটে যান সেই মিছিলে। তৎকালীন সরকার কর্তৃক আরোপিত ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করে ছাত্র-জনতার সঙ্গে বিক্ষোভ মিছিলে অংশগ্রহণ করেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজের হোস্টেল প্রাঙ্গণসহ পুরো রাজপথ মিছিলের পদভারে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। মিছিলে পাকিস্তানি পুলিশ নির্বিচারে ছাত্র-জনতার ওপর গুলিবর্ষণ শুরু করলে মেডিকেল হোস্টেলের ১৭ নম্বর রুমের পূর্ব দিকে রফিক উদ্দিন মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে শহিদ হন। পরে পুলিশ তার মৃতদেহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে নিয়ে যায় এবং পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর প্রহরায় ঢাকার আজিমপুর কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হয়। কিন্তু তার কবরের কোনো চিহ্ন রাখা হয়নি। ভাষা আন্দোলনে তার আত্মত্যাগের জন্য ২০০০ সালে বাংলাদেশ সরকারে তাকে মরণোত্তর একুশে পদক প্রদান করে। এছাড়া তার গ্রামের নাম পরিবর্তন করে রফিকনগর করা হয়। ২০০৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে গ্রামে তার নামে ‘ভাষাশহিদ রফিকউদ্দিন আহমদ গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর’ প্রতিষ্ঠা করা হয়। তার নাম অনুযায়ী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি প্রাতিষ্ঠানিক ভবনের নামকরণ ‘ভাষাশহিদ রফিক ভবন’ করা হয়।

কাজী সালমা সুলতানা