Print Date & Time : 26 July 2025 Saturday 7:06 pm

স্মরণীয়-বরণীয়

আজ দার্শনিক, মানবতাবাদী, চিন্তাবিদ ও বিজ্ঞানমনস্ক লেখক আরজ আলী মাতুব্বরের ৩৬তম মৃত্যুবার্ষিকী। তিনি ১৯৮৫ সালের এই দিনে মৃত্যুবরণ করেন। আরজ আলী মাতুব্বর নিজ চেষ্টা ও সাধনায় বিজ্ঞান, ইতিহাস, ধর্ম ও দর্শনসহ বিভিন্ন বিষয়ের ওপর জ্ঞান অর্জন করেন। যুক্তির আলোকে মানুষের মাঝে মুক্তচিন্তার নতুন দিগন্ত উম্মোচন করে গেছেন তিনি। অতিথি শিক্ষক হিসেবে ক্লাস নিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। আরজ আলী মাতুব্বর ১৯০০ সালের ১৭ ডিসেম্বর বরিশাল জেলার চরবাড়িয়া ইউনিয়নের লামছড়ি গ্রামে এক দরিদ্র কৃষক পরিবারে জš§গ্রহণ করেন। তার প্রকৃত নাম ছিল ‘আরজ আলী’। শৈশবে তিনি মক্তবে কোরআন ও ইসলামিক ইতিহাস বিষয়ে শিক্ষা গ্রহণ করেন। পরে এক সহƒদয় ব্যক্তির সহায়তায় দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়া শেষ করেন। বই পড়ার প্রচণ্ড আগ্রহ থেকে তিনি বরিশাল পাবলিক লাইব্রেরির সমস্ত বাংলা বই পড়ে ফেলেন। দর্শন ছিল তার প্রিয় বিষয়। তিনি তার অর্জিত সম্পদ দিয়ে গড়ে তোলেন ‘আরজ মঞ্জিল পাবলিক লাইব্রেরি’। কৃষিকাজ দিয়েই আরজ আলীর কর্মজীবনের শুরু। পরে কাজের অবসরে জমি জরিপের কাজ করে তিনি আমিনি পেশায় দক্ষতা অর্জন করে জমি জরিপের কাজকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন। আরজ আলী বস্তুবাদী দর্শনে বিশ্বাসী ছিলেন। তিনি অজ্ঞতা, কুসংস্কার ও ধর্মীয় গোঁড়ামির বিরুদ্ধে লেখালেখি করেন। তার প্রথম রচিত গ্রন্থ ‘সত্যের সন্ধনে’। এই গ্রন্থের প্রচ্ছদ তিনি নিজেই করেন। তার আরেক বই ‘সৃষ্টির রহস্য’ প্রকাশিত হওয়ার পর তিনি স্বশিক্ষিত দার্শনিক হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। তার রচিত পাণ্ডুলিপির সংখ্যা মোট ১৫টি। তার বেশ কিছু লেখা ‘আরজ আলী মাতুব্বর রচনাবলী’ নামে কয়েকটি খণ্ডে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়েছে এবং কিছু লেখা ইংরেজিতেও ভাষান্তর করা হয়েছে। তদানীন্তন পাকিস্তানে তার কয়েকটি বইয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা ছিল। তিনি বাংলা একাডেমির আজীবন সদস্য ছিলেন। পেয়েছেন হুমায়ুন কবির স্মৃতি পুরস্কার ও উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী কর্তৃক বরণীয় মনীষী হিসেবে সম্মাননা। তিনি নিজ দেহ ও চক্ষু মানবতার সেবায় উৎসর্গ করেন।

কাজী সালমা সুলতানা