স্মরণীয়-বরণীয়

শহিদ বুদ্ধিজীবী সাংবাদিক নিজাম উদ্দিন আহমেদের ৫১তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের পাঁচ দিন আগে তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনী, রাজাকার ও আলবদর বাহিনীর বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের অংশ হিসেবে অপহƒত ও পরে শহিদ হন। নিজাম উদ্দিন আহমেদ ১৯২৯ সালে মুন্সীগঞ্জ জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৫১ সালে তিনি স্নাতক (সম্মান) এবং ১৯৫২ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৬৫ সালে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে নিজাম উদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকতা শুরু করেন। ১৯৫০ সালে করাচির ‘সিভিল অ্যান্ড মিলিটারি গেজেট’ পত্রিকায় কাজ করেন। এরপর তিনি ‘দৈনিক মিল্লাত’, ‘দৈনিক আজাদ’, ‘ঢাকা টাইমস’, ‘পাকিস্তান অবজারভার’, ‘এপিপি’, ‘এএফপি’, ‘রয়টার’, ইউপিআইসহ বিভিন্ন পত্রিকা ও সংবাদ সংস্থায় কাজ করেন। ১৯৫৮ সালে তিনি ‘এপিপি’র পূর্ব পাকিস্তানের প্রথম প্রতিনিধি নিযুক্ত হন এবং ১৯৬৪ সালে ‘পিপিআই’র সম্পাদক হন। তিনি কেন্দ্রীয় পাট বোর্ড, যক্ষ্মা সমিতি এবং চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের সদস্য ছিলেন। নিজাম উদ্দিন আহমেদ ’৫২-র ভাষা আন্দোলন, ’৫৪-র যুক্তফ্রন্টের নির্বাচন, ’৫৮-র রবীন্দ্রসংগীত নিষেধবিরোধী আন্দোলন, ’৬২-র শিক্ষা আন্দোলন, ’৬৬-র ছয় দফা ও ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।

পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ঢাকায় গণহত্যা শুরু করলে নিজাম উদ্দিন আহমেদ সেই বিভীষিকাময় রাতে সংবাদ সংগ্রহের জন্য ঘর থেকে বেরিয়ে পড়েন। যুদ্ধের ভয়াবহতা বাড়তে থাকলে একাত্তরের এপ্রিল নাগাদ পরিবারকে গ্রামের বাড়ি মাওয়ায় পাঠিয়ে দিয়ে তিনি ঢাকায় থেকে যান। এ সময়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তিনি পেশাগত দায়িত্ব পালন করেন। পরে পরিবারকে ঢাকায় নিয়ে আসেন। মুক্তিযুদ্ধকালে নিজাম উদ্দিন আহমেদ বাঙালিদের ওপর পাকিস্তানিদের বর্বরোচিত আক্রমণের সংবাদ নিয়মিতভাবে নিউইয়র্ক টাইমস ও বিবিসিতে পাঠাতেন। তিনি যুদ্ধ পরিস্থিতি, গণহত্যা ও পাকিস্তান বাহিনীর বর্বরতার সংবাদ তুলে ধরতেন ওই সংবাদমাধ্যমে। ১৯৭১ সালের ১২ ডিসেম্বর নিজাম উদ্দিন আহমেদ বাসায় বসে সকাল থেকে টানা একটা পর্যন্ত নিজেই সংবাদ টাইপ করেন। লেখা শেষ করে স্ত্রীকে দুপুরের খাবার দিতে বলেন। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে যখন খেতে বসেছেন, তখন ঘাতকেরা হানা দেয় নিজাম উদ্দিন আহমেদের বাড়িতে। খাবার শেষ হওয়ার আগেই টেবিল থেকে তাকে তুলে নিয়ে যায় ঘাতকেরা। এরপর আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি তার। নিজাম উদ্দিন আহমেদসহ ১৮ বুদ্ধিজীবীকে অপহরণের পর হত্যার দায়ে ২০১৩ সালের ৩ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ চৌধুরী মুঈনুদ্দীন ও আশরাফুজ্জামান খানকে ফাঁসির আদেশ দেন।

কাজী সালমা সুলতানা