স্মরণীয়-বরণীয়

কবি, গীতিকার, নাট্যকার ও চিত্রপরিচালক অজয় ভট্টাচার্যের ৭৯তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি ১৯০৬ সালে ত্রিপুরার শ্যাম গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পড়াশোনা শুরু হয় কুমিল্লার দানবীর মহেশচন্দ্র ভট্টাচার্য প্রতিষ্ঠিত ঈশ্বর পাঠশালায়। স্কুলে ছাত্র থাকাকালীন তার মধ্যে সংগীত, সাহিত্য, গান, নাটক ইত্যাদিতে পারদর্শিতা জন্মে। পরে ১৯২৯ সালে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে বাংলায় এমএ পাস করেন। অজয় ভট্টাচার্য কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে অধ্যাপনার মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করেন। পরে সেই চাকরি ছেড়ে ত্রিপুরার কুমার শচীন দেববর্মণের আমন্ত্রণে কলকাতায় চলে যান। ছাত্রজীবনে বিদ্রোহী কবি নজরুল ইসলামের সঙ্গে তিনি পরিচিত হন। সেই সূত্রে নজরুল সম্পাদিত ‘ধূমকেতু’ কাগজে তার প্রথম কবিতা ‘উল্কা’ প্রকাশিত হয়।

অজয় ভট্টাচার্যের গানের জগৎ ছিল বহুবিস্তৃত কাব্যগীতি, পল্লীগীতি,  ভাটিয়ালি,  বাউল,  রাগপ্রধান, কীর্তন,  সাধনসংগীত,  ভজন প্রভৃতি। কাব্যগীতিতে বিষয়-বৈচিত্র্য ছিল প্রচুর। চলচ্চিত্র ও গ্রামোফোন রেকর্ড উভয় ক্ষেত্রেই তার লেখা গান ব্যাপক সাড়া জাগায়। বাংলা সবাক চলচ্চিত্রের শুরু থেকেই তার গান অনেক প্রচলিত ছিল। তার রচিত গানের সংখ্যা দুই হাজারেরও বেশি। শচীন দেব বর্মণ তার বহু গানে সুর দিয়েছেন। তার গানগুলো সংকলন আকারে প্রকাশিত হয়েছে।

গান লেখা ছাড়াও অজয় ভট্টাচার্য চলচ্চিত্রের কাহিনি ও সংলাপ রচনা করেন। অধিকার, শাপমুক্তি, নিমাই সন্ন্যাস, মহাকবি কালিদাস প্রভৃতি চলচ্চিত্রের গল্প বা সংলাপ তিনিই রচনা করেন।

চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবেও তিনি সফল হন। তার পরিচালিত চলচ্চিত্র দুটি হচ্ছে অশোক ও ছদ্মবেশী।

তার রচিত তিনটি সংকলন ‘আজি আমারি কথা’, ‘মিলন-বিরহ-গীতি’ ও ‘শুক-সারী’ ও তার মৃত্যুর পর প্রকাশিত হয় ‘আজও ওঠে চাঁদ’। এছাড়া তার রচিত কাব্যগ্রন্থ ‘রাতের রূপকথা’, ‘ঈগল ও অন্যান্য কবিতা’, ‘সৈনিক ও অন্যান্য কবিতা’ প্রভৃতি। তিনি ১৯৪৩ সালের ২৪ ডিসেম্বর মৃত্যুবরণ করেন।

কাজী সালমা সুলতানা