স্মরণীয়-বরণীয়

আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন প্রতিভাবান চিত্রশিল্পী জয়নুল আবেদিনের আজ ১০৮তম জন্মবার্ষিকী। তার অসাধারণ শিল্প-মানসিকতা ও কল্পনাশক্তির জন্য তিনি শিল্পাচার্য উপাধিতে ভূষিত হন। দুর্ভিক্ষ-চিত্রমালা, মই দেয়া, সংগ্রাম, সাঁওতাল রমণী, ঝড়, কাক, বিদ্রোহী ইত্যাদি তার বিখ্যাত চিত্রকর্ম। জয়নুল আবেদিনের ১৯৭০ সালে গ্রামবাংলার উৎসব নিয়ে আঁকা ৬৫ ফুট দীর্ঘ  বিখ্যাত ছবি নবান্ন। জয়নুল আবেদিন ১৯১৪ সালের ২৯ ডিসেম্বর তৎকালীন ময়মনসিংহ জেলার কিশোরগঞ্জ মহকুমায় তিনি জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৩৩ সালে তিনি কলকাতা সরকারি আর্ট স্কুলে ভর্তি হন। সেখানে পাঁচ বছর ব্রিটিশ, ইউরোপীয় স্টাইলের ওপর পড়াশোনা করেন। ১৯৩৮ সালে তিনি আর্ট স্কুল অনুষদে যোগ দেন এবং তার চিত্রাঙ্কন চালিয়ে যেতে থাকেন। ১৯৩৮ সালে সর্ব ভারতীয় চিত্রকলা প্রদর্শনীতে তার অঙ্কিত জলরঙের ছবির জন্য তিনি স্বর্ণপদক প্রাপ্ত হন। তার অঙ্কনের মূল বিষয়বস্তু ছিল ব্রহ্মপুত্র নদ, যা তার আশৈশব প্রেরণার বিষয়। এ স্বীকৃতিই তাকে প্রথমবারের মতো আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে আসে। তিনি নিজস্ব একটি ধারা সৃষ্টির প্রতি আত্মবিশ্বাস লাভ করেন। জয়নুল তার প্রথম জীবনে নদী ও অবারিত প্রকৃতির মাঝে চিত্রাঙ্কনের অনুপ্রেরণা পান। ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষে জয়নুল আবেদিন ধারাবাহিকভাবে একাধিক চিত্র স্কেচ করেন। এ দুর্ভিক্ষে হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারায়। ‘দুর্ভিক্ষের রেখাচিত্র’ নামে পরিচিত জয়নুলের এ চিত্রকর্মে ফুটে উঠেছে শব-সওদাগরদের নিষ্ঠুরতা ও নৈতিক কলুষতা, সে সঙ্গে নিপীড়িতের অমানবিক দুর্দশা। জয়নুল আবেদিনের উদ্যোগে ১৯৪৮ সালে পুরান ঢাকার জনসন রোডে গভর্নমেন্ট আর্ট ইনস্টিটিউট স্থাপিত হয়। তিনি এ প্রতিষ্ঠানের প্রথম শিক্ষক। ১৯৭১-এ বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর এ প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘বাংলাদেশ চারু ও কারুকলা মহাবিদ্যালয়’। ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত তিনি এর প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তারই আগ্রহ ও পরিকল্পনায় সরকার ১৯৭৫ সালে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে লোকশিল্প জাদুঘর ও ময়মনসিংহে জয়নুল সংগ্রহশালা প্রতিষ্ঠা করে। জয়নুল আবেদিন ১৯৪৩ সালে দুর্ভিক্ষ চিত্রমালার জন্য বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেন। তার বিখ্যাত শিল্পকর্মগুলো হলো: ১৯৫৭-এ নৌকা, ১৯৫৯-এ সংগ্রাম, ১৯৭১-এ বীর মুক্তিযোদ্ধা, ম্যাডোনা প্রভৃতি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ১৯৭৪-এ অঙ্কিত ‘মনপুরা-৭০’ জননন্দিত শিল্পকর্ম হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। তার চিত্রকমের্র সংখ্যা তিন হাজারের বেশি। ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ সরকার শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনকে জাতীয় অধ্যাপকের সম্মান প্রদান করে। ১৯৭৬ সালের ২৮ এই গুণি শিল্পী মৃত্যবরণ করেন।

কাজী সালমা সুলতানা