ভাষাসৈনিক ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. শাফিয়া খাতুনের ৯১তম জন্মদিন আজ। ১৯৫২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীদের একমাত্র আবাসস্থল চামেরি হাউস ছাত্র সংসদের ভিপি ছিলেন তিনি। ভাষা আন্দোলনে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি ২০১৭ সালে একুশে পদক লাভ করেন।
ড. শাফিয়া খাতুন ১৯৩১ সালের ১৫ জানুয়ারি লালমনিরহাট জেলার বত্রিশ হাজারী গ্রামে জš§গ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগ থেকে তিনি এমএ ও ১৯৬১ সালে এমএড ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৬৫ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মনোবিজ্ঞানে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৬৬ সালে তিনি অধ্যাপক হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে যোগদানের মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৭৭ সালে তিনি বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সদস্য ও ১৯৮৩ সালে সমাজ কল্যাণ ও মহিলা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫২ সালের ২৭ জানুয়ারি তৎকালীন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন ঢাকার পল্টন ময়দানের জনসভায় উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার কথা ঘোষণা দিলে ছাত্র-জনতার সঙ্গে তৎকালীন ছাত্রনেতা শাফিয়া খাতুন এর প্রতিবাদ করেন। সে সময় তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের আবাসস্থল ‘চামেলি হাউস’-এর ছাত্র সংসদের ভিপি। ভাষা আন্দোলনে ছাত্রীদের সংগঠিত করার কাজে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। ১৯৫২ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের আহ্বানে ছাত্র ধর্মঘট চলাকালীন ছাত্রীদের মিছিলে নেতৃত্ব দেন তিনি। চামেলি হাউসে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে বেশ কয়েকটি বৈঠক, সমাবেশ ও মিছিলে নেতৃত্ব দেন তিনি। তার সাংগঠনিক পারদর্শিতার জন্য ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় অনুষ্ঠিত ছাত্রজনতার সমাবেশে বিপুলসংখ্যক ছাত্রীকে নিয়ে আসা সম্ভব হয়। সেদিন তিনি ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে সব ছাত্রছাত্রীর একসঙ্গে বের হওয়ার পক্ষে অবস্থান নেন। প্রথম দলে যে মেয়েরা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে সে দলে ছিলেন তিনি। পরে তার সঙ্গে অন্য মেয়েরাও ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করেন। আন্দোলনে ভাষাসৈনিক সুফিয়া ইব্রাহীম, রওশন আরা বাচ্চু, শামসুন্নাহার, হালিমা খাতুনসহ অনেকে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৫২ সালের ২২, ২৩ ও ২৪ ফেব্রুয়ারি সব সমাবেশ ও প্রতিবাদ মিছিলে তিনি উপস্থিত থাকতেন। ভাষা আন্দোলনে তার ভূমিকার কথা স্মরণ করে ঢাকা করপোরেশন ধানমন্ডিতে একটি রাস্তার নামকরণ করেছে ‘ভাষাসৈনিক শাফিয়া খাতুন সড়ক’। ১৯৯৩ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
কাজী সালমা সুলতানা