Print Date & Time : 20 July 2025 Sunday 6:07 pm

স্মরণীয়-বরণীয়

ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম নেতা মাস্টার দা সূর্যসেনের ১২৯তম জন্মদিন আজ। তিনি তৎকালীন ব্রিটিশবিরোধী সশস্ত্র আন্দোলনে অগ্রনায়কের ভূমিকা রাখেন। মাস্টার দা সূর্যসেন ১৮৯৪ সালের ২২ মার্চ চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার নোয়াপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯১২ সালে চট্টগ্রামের হরিশদত্তের ন্যাশনাল স্কুল থেকে প্রবেশিকা (এন্ট্রান্স), চট্টগ্রাম কলেজ থেকে এফ এ এবং ১৯১৮ সালে তিনি বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজ থেকে বিএ পাস করেন। 

১৯১৬ সালে বিএ পড়ার সময় তিনি বৈপ্লবিক আদর্শে দীক্ষিত হয়ে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। ১৯১৮ সালে ‘যুগান্তর’ দলের চট্টগ্রাম শাখার সঙ্গে এবং ১৯২৯ সালে চট্টগ্রাম জেলা কংগ্রেসের সম্পাদক পদে নির্বাচিত হন তিনি। আত্মরক্ষার কৌশল হিসেবে তিনি ‘ন্যাশনাল স্কুল’-এ শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। শিক্ষকতার কারণে তিনি ‘মাস্টার দা’ উপাধি পান। মাস্টার দা ব্রিটিশ রাজত্ব অবসানের লক্ষ্যে চট্টগ্রামের বিপ্লবীদের সংগঠিত করেন। ১৯৩০ সালের ১৮ এপ্রিল চট্টগ্রামের অস্ত্রাগার লুণ্ঠন ও সশস্ত্র বিদ্রোহের প্রধান সংগঠক সূর্যসেন। তারই নেতৃত্বে বিপ্লবীরা সেদিন দামপাড়ায় পুলিশ রিজার্ভ ব্যারাক দখল করে নেয় ও জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। তারা কুচকাওয়াজ করে মাস্টার দা সূর্যসেনকে সংবর্ধনা দেয়। তিনি অস্থায়ী বিপ্লবী সরকার গঠনের ঘোষণা দেন। সেদিন থেকে চারদিন চট্টগ্রাম সম্পূর্ণ ব্রিটিশ শাসনমুক্ত ছিল। এ সময় ইংরেজ সরকার তাকে ধরার জন্য পুরস্কার ঘোষণা করে। ১৯৩২ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার পাহাড়তলি ইউরোপিয়ান ক্লাবে সফল আক্রমণ চালান, তবে তিনি গুলিবিদ্ধ হন এবং সায়ানাইড খেয়ে আত্মহত্যা করেন। এ ঘটনার পরে মাস্টার দা আত্মগোপন করেন। ১৯৩৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি তিনি তার সঙ্গী ধরা পড়েন। বিচারে ব্রিটিশ সরকার তাকে প্রাণদণ্ডে দণ্ডিত করেন। দণ্ড কার্যকর করার আগে ব্রিটিশ সেনারা সূর্যসেন এবং তারকেশ্বর দস্তিদারের ওপর নির্মমভাবে অত্যাচার করে। অত্যাচারে তিনি প্রায় অর্ধমৃত হয়ে পড়েন । এরপর তাদের অর্ধমৃতদেহ দুটি ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দেয়া হয়। পরে মৃত সূর্যসেন ও তারকেশ্বর দস্তিদারের মৃতদেহের বুকে লোহার টুকরা বেঁধে বঙ্গোপসাগর আর ভারত মহাসাগরের সংলগ্ন একটা জায়গায় ফেলে দেয়া হয়। তার সম্মানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসিক হলের নামকরণ করা হয়েছে।

কাজী সালমা সুলতানা