স্মরণীয়-বরণীয়

স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতিটি অধ্যায়ে প্রথম কাতারের সংগঠক রাজনীতিবিদ কাজী আরেফ আহমেদ। আজ তার ৮১তম জš§দিন। তিনি ১৯৪২ সালে ৮ এপ্রিল কুষ্টিয়ার ঝাউদিয়ায় মাতুলালয়ে জন্ম করেন। তার পৈতৃক বাড়ি কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার খয়েরপুর কচুবাড়িয়া গ্রামে। ১৯৪৭ সালে পিতার চাকুরিসূত্রে তিনি ঢাকা টিকাটুলিতে স্থায়ীভাবে বসবাস করা শুরু করেন। কাজী আরেফ ১৯৬০ সালে পুরান ঢাকার কলেজিয়েট স্কুল থেকে মেট্রিকুলেশন উত্তীর্ণ হন। এরপর জগন্নাথ কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন এবং একই কলেজ থেকে ১৯৬৬ সালে বিএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূগোল বিভাগে স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে ভর্তি হন। ১৯৬০ সালে হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশনের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে তিনি রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে পাকিস্তানবিরোধী আন্দোলনে সম্পৃক্ততার অভিযোগে তাকে স্নাতকোত্তর ফাইনাল পরীক্ষায় অবতীর্ণ হতে দেয়া হয়নি। স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরে ১৯৬২ সালে গড়ে তোলা হয় গোপন সংগঠন ‘স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ’। বিপ্লবী পরিষদের তিন সদস্যের অন্যতম ছিলেন কাজী আরেফ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬৬ সালে বাঙালির মুক্তির সনদ ছয় দফা ঘোষণা দেন। ছয় দফার সমর্থনে ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি কাজী আরেফের নেতৃত্বে প্রথম মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৭০ সালে গঠিত ‘জয়বাংলা বাহিনীর অন্যতম সংগঠক ছিলেন তিনি। জাতীয় পতাকার অন্যতম রূপকার কাজী আরেফ। মুক্তিযুদ্ধকালে তিনি দেরাদুনে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ প্রদান করেন। সে সময় তিনি ছিলেন বিএলএফ বা মুজিব বাহিনীর পশ্চিমাঞ্চলীয় সেক্টরের উপঅধিনায়ক ও মুজিব বাহিনীর ৪টি সেক্টরের সমন্বয়ক ও গোয়েন্দা শাখার প্রধান। ১৯৭২ সালে গঠিত জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা কাজী আরেফ। ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নৃশংসভাবে সপরিবারে হত্যার পর ১৯৭৮ সালে তিনি ১০ দলীয় ঐক্যজোট গড়ে তুলতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। ১৯৯০’র সামরিক স্বৈরাচারবিরোধী ছাত্র গণ-অভ্যুত্থানেও অন্যতম ভূমিকা রাখেন ।  ১৯৯২ সালে তিনি মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তি ও যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে গড়ে তোলেন তীব্র আন্দোলন। ১৯৯৯ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের কালিদাসপুরে জনসভা মঞ্চে  তিনি সন্ত্রসীদের গুলিতে নিহত হন। 

কাজী সালমা সুলতানা