স্মরণীয়-বরণীয়

প্রগতিশীল লেখক ও শিল্পী সংঘ উদীচী সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের বিপ্লবী সাহিত্যিক এবং শ্রমিক-সংগঠক সত্যেন সেনের আজ ১১৪তম জন্মবার্ষিকী। তিনি আদমজী সাহিত্য পুরস্কার, বাংলা একাডেমি পুরস্কার ও একুশে পদক লাভ করেন। সত্যেন সেন ১৯০৭ সালের এদিনে (২৮ মার্চ) বিক্রমপুর (বর্তমান মুন্সীগঞ্জ জেলা) টঙ্গিবাড়ী উপজেলার সোনারং গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ছোটবেলায় তার ডাকনাম ছিল লস্কর। কলেজে অধ্যয়নকালে সত্যেন সেন বিপ্লবী দল যুগান্তরের সঙ্গে যুক্ত হন। ১৯৩১ সালে কারাবরণ করলে জেলে থেকেই তিনি বাংলা সাহিত্যে এমএ পাস করেন। ব্রিটিশ শাসনামলে ও পরবর্তীকালে পাকিস্তান আমলেও তিনি একাধিকবার গ্রেপ্তার ও কারাবরণ করেন। ১৯৪৮ সালে কারা প্রশাসনের অত্যাচার ও নির্যাতনে সত্যেন সেনের শারীরিক অসুস্থতা দেখা দেয়। কারাবাসে অবস্থানকালে তিনি মার্কসবাদী-লেনিনবাদী রাজনৈতিক মতাদর্শ ও দর্শনের প্রতি আকৃষ্ট হন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করেন। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংরক্ষণে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। সত্যেন সেন গণমানুষের জন্য মানুষের জীবনবাস্তবতার গান রচনা ও সুর করেন। শ্রমিকদের নিয়ে তিনি গান ও পালা রচনা করেন। তার লেখা ১১টি গানের মধ্যে ‘চাষি দে তোর লাল সেলাম/তোর লাল নিশানারে’ গানটি তখন চাষিদের মাঝে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। সত্যেন সেন নির্ভীক সাংবাদিক ছিলেন। প্রথমে দৈনিক ‘মিল্লাত’ পরবর্তী সময়ে দৈনিক ‘সংবাদ’-এ তিনি সাংবাদিকতা করেন। তিনি সাহিত্য রচনায় উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন। তিনি ১৫টি উপন্যাসসহ বেশ কিছু সাহিত্য রচনা করেন। তার রচিত ছোটদের বিখ্যাত উপন্যাস ‘পাতাবাহার’। ১৯৬৯ সালে বিপ্লবী কথাশিল্পী সত্যেন সেন, রণেশ দাশগুপ্ত, শহীদুল্লাহ কায়সারসহ একঝাঁক তরুণ উদীচী গঠন করেন। উদীচী ’৬৮, ’৬৯, ’৭০ ও ’৭১ সালে বাঙালির সার্বিক মুক্তির চেতনাকে ধারণ করে গড়ে তোলে সাংস্কৃতিক সংগ্রাম। এ সংগ্রাম গ্রামবাংলার পথেঘাটে ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৭৩ সালে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তিনি চিকিৎসার জন্য চলে যান ভারতে। ১৯৮১ সালের ৫ জানুয়ারি তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

কাজী সালমা সুলতানা