প্রথিতযশা সংগীতশিল্পী, সুরকার ও সংগীত পরিচালক কমল দাশগুপ্তের ১১১তম জন্মদিন আজ। তিনি গ্রামোফোন কোম্পানি হিজ মাস্টার্স ভয়েস রেকর্ড কোম্পানির সংগীত পরিচালক এবং সর্বাধিক নজরুল গীতির সুরকার। তার সংগীত পরিচালনায় ৮০টি চলচ্চিত্রের মধ্যে ‘যোগাযোগ’, ‘শেষ উত্তর’, ‘চন্দ্রশেখর’ ও ‘শ্রীকৃষ্ণ চৈতন্য’ শ্রেষ্ঠ পুরস্কারে ভূষিত হয়।
কমল দাশগুপ্ত বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের ঘনিষ্ঠ সাহচর্য লাভ করেন এবং প্রায় চারশ নজরুল গীতিতে সুরারোপ করেন। এইচএমভিতে মাত্র এক মাসে ৫৩টি গান রেকর্ড করে তিনি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। কমল দাশগুপ্ত ১৯১২ সালের ২৮ জুলাই জন্মগ্রহণ করেন। তার পুরো নাম কমলপ্রসন্ন দাশগুপ্ত হলেও তিনি কমল দাশগুপ্ত নামেই সমধিক পরিচিত। তার পৈতৃক বাড়ি নড়াইল জেলার কালিয়া থানার বেন্দা গ্রামে। শৈশব থেকেই কমল দাশগুপ্ত পেয়েছিলেন সংগীতময় পরিবেশ। ১৯২৮ সালে তিনি ম্যাট্রিক এবং পরে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে বিকম পাস করেন। সহোদর বিমল দাশগুপ্তের কাছে তার সংগীতে হাতেখড়ি হয়। কমল দাশগুপ্তের সুরে প্রথম রেকর্ড বের হয় ১৯৩২ সালে এপ্রিল মাসে। ওই বছরের সেপ্টেম্বরে ‘মাস্টার কমল’ নামে তার নিজের লেখা ও সুরে গাওয়া রেকর্ড বের হয়। ১৯৪৩ সালে তিনি বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট অব মিউজিক ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ভজন, উচ্চাঙ্গসংগীত, নজরুলগীতিসহ সংগীতের সব শাখায় সমান দক্ষ ছিলেন। আধুনিক বাংলা, উর্দু, হিন্দি, ঠুমরি ও ছায়াছবির সংগীতে তিনি কণ্ঠদান ও সুরারোপ করেন। তার সুর দেয়া ও গাওয়া ‘তুফান মেল’, ‘শ্যামলের প্রেম’, ‘এই কি গো শেষ দান’ চলচ্চিত্রের এ গানগুলো ভীষণ জনপ্রিয়তা লাভ করে। এছাড়া তার সংগীত পরিচালনায় ‘সাঁঝের তারকা আমি’, ‘আমি ভোরের যূথিকা’ প্রভৃতি গানও জনপ্রিয়তা পায়। ভারতীয় রণসংগীত ‘কদম কদম বাড়ায়ে যা’ তার অনবদ্য সৃষ্টি। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ওয়ার প্রোপাগান্ডা ছবির নেপথ্য সংগীতেও কাজ করেন। ১৯৫৭ সালে তিনি বাংলাদেশের প্রখ্যাত নজরুল সংগীতশিল্পী ফিরোজা বেগমকে বিয়ে করেন। তার সুরারোপিত গানের সংখ্যা প্রায় আট হাজার। সংগীতের ক্ষেত্রে তার মৌলিক অবদান স্বরলিপির শর্টহ্যান্ড পদ্ধতির উদ্ভাবন এবং আকারমাত্রিক পদ্ধতি ও স্টাফ নোটেশন পদ্ধতির স্বরলিপি স্থাপন। এ গুণী শিল্পী ১৯৭৪ সালের ২০ জুলাই মৃত্যুবরণ করেন।
কাজী সালমা সুলতানা