স্মরণীয়-বরণীয়

মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার, সামরিক কর্মকর্তা ও বিপ্লবী নেতা কর্নেল আবু তাহের বীর উত্তমের আজ ৪৭তম মৃত্যুবার্ষিকী। আবু তাহের ১৯৩৮ সালের ১৪ নভেম্বর আসামের বদরপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈত্রিক নিবাস নেত্রকোনা জেলার পূর্বধলা উপজেলার কাজলা গ্রামে। তিনি চট্টগ্রামের ফতেহাবাদ স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। আবু তাহের ১৯৫২ সালে কিশোর বয়সে তিনি ভাষা আন্দোলনে যোগদান করেন। তিনি ১৯৫৯ সালে সিলেট এমসি কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৬০ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগদান করার আগ পর্যন্ত কিছুদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে এমএ প্রথম পর্বে  পড়াশোনা করেন। ১৯৬৫ সালে তিনি সেনাবাহিনীর স্পেশাল সার্ভিস গ্রুপে (কমান্ডো বাহিনী) বদলি হন। সে বছরেই তিনি পাক-ভারত যুদ্ধে প্রথমে কাশ্মীর ও পরে শিয়ালকোট রণাঙ্গনে অংশগ্রহণ করে বীরত্বের জন্য খেতাব লাভ করেন।

 ১৯৬৯ সালের শেষের দিকে তিনি আমেরিকার ফোর্ট ব্রাগ ও ফোর্ট বেনিং-এ গেরিলা যুদ্ধের ওপর প্রশিক্ষণ গ্রহণ এবং উচ্চতর সমরবিদ্যায় অনার্স গ্র্যাজুয়েশন লাভ করেন। ১৯৭০ সালে তিনি কোয়েটা স্টাফ কলেজে সিনিয়র ট্যাকটিক্যাল কোর্সে অংশগ্রহণ করেন।  ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তান সেনাবাহিনী কর্তৃক বাংলাদেশে গণহত্যার প্রতিবাদে তিনি স্টাফ কলেজ ত্যাগ করেন ও পাকিস্তানের সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। তিনি ১১নং সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ছাড়াও তার পরিবারের আরও ৬ ভাই, এক বোন মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালের ১৪ নভেম্বর কামালপুর শত্রু ঘাঁটিতে আক্রমণ পরিচালনাকালে তিনি আহত হন এবং তার বাম পা  হাঁটু থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। কর্নেল তাহের মুক্তিযুদ্ধে বীরত্ব প্রদর্শনের জন্য ‘বীরউত্তম’ রাষ্ট্রীয় খেতাবে ভূষিত হন। কর্নেল আবু তাহের ১৯৭২ সালে ৪৪তম ব্রিগেডের অধিনায়ক ও কুমিল্লা সেনানিবাসের অধিনায়কের দায়িত্ব লাভ করেন। ১৯৭২ সালে তিনি সেনাবাহিনী থেকে পদত্যাগ করে সক্রিয় রাজনীতিতে যোগ দেন। তিনি জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক কমিটির সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর আবু তাহের জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সহযোগিতায় সিপাহি-জনতার গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেন। ১৯৭৫ সালের ২৩ নভেম্বর তিনি গ্রেপ্তার হন। কারাগারের অভ্যন্তরে তাহেরসহ ৩৪ জনের বিরুদ্ধে সামরিক ট্রাইব্যুনালে বিচার হয়। ১৯৭৬ সালের ১৭ জুলাই আদালত কর্নেল তাহেরের মৃত্যুদণ্ডসহ অন্যদের বিভিন্ন মেয়াদি সাজা প্রদান করে। ১৯৭৬ সালের ২১ জুলাই তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।

কাজী সালমা সুলতানা