কবি, গীতিকার, শিল্পী রজনীকান্ত সেনের আজ ১৫৮তম জন্মদিন। তাকে কান্তকবি ও স্বদেশি আন্দোলনের যুগের কবিও বলা হয়। ‘পঞ্চকবি’দের একজন তিনি। পঞ্চকবির অন্যরা হলেনÑরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, অতুল প্রসাদ সেন। রজনীকান্ত সেন ১৮৬৫ সালের ২৬ জুলাই পাবনা জেলার সিরাজগঞ্জ মহকুমার ভাঙ্গাবাড়ী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ছেলেবেলায় তিনি বেশ ডানপিটে স্বভাবের ছিলেন। খেলাধুলা ব্যস্ত থাকলেও অসম্ভব মেধার কারণে বরাবরই পরীক্ষায় ভালো ফল করেন। তিনি কুচবিহার জেনকিন্স স্কুল থেকে এন্ট্রান্স, রাজশাহী কলেজ থেকে এফএ এবং কলকাতা সিটি কলেজ থেকে বিএ ও বিএল ডিগ্রি লাভ করে, রাজশাহী কোর্টে ওকালতি শুরু করেন। কিছুদিন নাটোর ও নওগাঁয় অস্থায়ী মুন্সেফ ছিলেন। আইন পেশার পাশাপাশি তিনি সংগীত, সাহিত্য, নাটক অভিনয় ইত্যাদিতে সম্পৃক্ত হন। রজনীকান্ত সেন শৈশবে সংগীতজ্ঞ বাবা গুরুপ্রসাদ সেন কাছে একটি বাঁশিতেই সংগীতের অনুশীলন শুরু করেন। কিশোর বয়সে তিনি বাংলা ও সংস্কৃতÑউভয় ভাষায় কবিতা লিখা শুরু করেন। তার কবিতাগুলো স্থানীয় উৎস, আশালতা প্রমুখ সংবাদ-সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়। রাজশাহীতে তিনি বিভিন্ন সাহিত্যসভা, মজলিশ এবং অনুষ্ঠানে তিনি স্বরচিত গান পরিবেশন করতেন। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গকে কেন্দ্র করে স্বদেশি আন্দোলনে বিলাতি সব পণ্য বয়কট করে দেশীয় পণ্য ব্যবহার করার প্রতি যে আন্দোলন সংগ্রাম গড়ে ওঠে, সে আন্দোলনে রজনীকান্ত সমর্থন দেন ও রচনা করেন Ñ‘মায়ের দেওয়া মোটা কাপড় মাথায় তুলে নে রে ভাই; দীন দুখিনি মা যে তোদের তার বেশি আর সাধ্য নাই।’ তার এই গান সাধারণ মানুষকে স্বদেশি আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ করে। এর মাধ্যমেই তিনি খ্যাতি লাভ করেন এবং ‘কান্তকবি’ নামে পরিচিত হয়ে ওঠেন। তার মোট গানের সংখ্যা ২৯০টিরও বেশি। তিনি মূলত ভক্তিমূলক, দেশাত্মবোধক, হাস্যরসের গান এবং জীবনের গান করেছেন। তিনি বাণী, কল্যাণী ও অমৃত নামে তিনটি গ্রন্থ রচনা ও প্রকাশ করেন। মৃত্যুর পর তার অভয়া, আনন্দময়ী, বিশ্রাম, সদ্ভাবকুসুম ও শেষদান নামে আরও ৫টি বই প্রকাশিত হয়। কবি রজনীকান্ত সেন ১৯১০ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর তিনি মৃতুবরণ করেন। তাকে শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রখ্যাত কবি ও সাহিত্যিক আসাদ চৌধুরী ১৯৮৯ সালে রজনীকান্ত সেন শিরোনামে একটি জীবনীগ্রন্থ রচনা করেন।
কাজী সালমা সুলতানা