ইতালীয় উদ্ভাবক এবং বৈদ্যুতিক প্রকৌশলী গুগলিয়েলমো মার্কোনি। তিনি বেতারের জনক হিসেবে সমধিক পরিচিত। তার এই উদ্ভাবনকে কেন্দ্র করে বিশ্বের অসংখ্য ব্যবসায়িক ও প্রাযুক্তিক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। গুলিয়েলমো মার্কোনি ১৮৭৪ সালের ২৫ এপ্রিল ইতালির বোলোনে জš§গ্রহণ করেন। সাত বছর বয়সে তার মধ্যে পদার্থবিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহ জšে§। সে সময় তিনি লক্ষ করেন স্ফুলিঙ্গ থেকে যে শব্দ তরঙ্গের সৃষ্টি হয়, তা বিনা তারেই কিছু দূর যেতে পারে। এরপর ঘরে বসে তিনি বানিয়ে ফেলেন একটি ঘণ্টা, যার সঙ্গে তারের কোনো যোগাযোগ ছিল না। এরপর তিনি গবেষণার জন্য লন্ডনে চলে যান। ২০ বছর বয়সে তিনি জানতে পারেন সদ্য প্রয়াত একজন বিজ্ঞানী এমন একটি বৈদ্যুতিক যন্ত্র আবিষ্কার করেছেন, যার সাহায্যে বৈদ্যুতিক তরঙ্গ বিনা তারে ঘরের অন্যদিকে আগুনের ফুলকি জ্বালিয়ে দেয়। মার্কনি একনিষ্ঠ অধ্যবসায় ও গবেষণায় একটি যন্ত্র আবিষ্কার করেন; যার মাধ্যমে এক মাইল দূর পর্যন্ত বিনা তারে সংকেত পাঠানো সম্ভব। ১৮৯৯ সালে ইংলিশ চ্যানেলের এপার থেকে ওপার পর্যন্ত বিনা তারে সংবাদ আদান-প্রদান করতে সক্ষম হন তিনি। ১৯০১ সালে তিনি যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের মাঝে তারবিহীন সংযোগ (বেতার) স্থাপন করেন। তার এই উদ্ভাবনকে কেন্দ্র করেই বিশ্বের অসংখ্য ব্যবসায়িক ও প্রাযুক্তিক প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। ১৯০৯ সালে ইতালি সরকার তাকে আজীবন সিনেট সদস্য নির্বাচিত করে। একই বছর পদার্থবিজ্ঞানে তিনি নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে তিনি ইতালীয় বেতার-সার্ভিসের কমান্ডার নিযুক্ত হন। তার আবিষ্কৃত রেডিও সে সময় সমুদ্র ভ্রমণকে ব্যাপকভাবে সহায়তা করে এবং ১৯১২ সালে টাইটানিক জাহাজ ডুবে যাওয়া এবং ১৯১৫ সালে আরএমএস লুসটানিয়ায় ডুবে যাওয়া জাহাজের শত শত জীবন বাঁচাতে সহায়তা করে। ১৯২৯ সালে ইতালির তৎকালীন রাজা তাকে ‘মারকুইস’ খেতাবে ভূষিত করেন। অবশ্য মার্কোনির আগেই ম্যাক্সওয়েল, হার্ৎস কেলভিন, স্যার জগদীশচন্দ্র বসু, আলেক্সান্দর পপোভ বসু এ বিষয়ে গবেষণা করেন। সম্প্রতি জগদীশ চন্দ্র বসু প্রথম বেতার আবিষ্কারক হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন। গুগলিয়েলমো মার্চেজ মার্কোনি ১৯৩৯ সালের ২০ জুলাই মৃত্যুবরণ করেন।
-কাজী সালমা সুলতানা