স্মরণীয়-বরণীয়

‘…একজন বিপ্লবীকে বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে সংঘটিত যেকোনো অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে সবসময় দৃঢ়ভাবে রুখে দাঁড়াতে হবে’ চে গুয়েভারা। চিকিৎসক, লেখক, বুদ্ধিজীবী, গেরিলা নেতা, কূটনীতিবিদ, সামরিক তত্ত্ববিদ এবং কিউবার বিপ্লবের প্রধান সাম্যবাদী ব্যক্তিত্ব চে গুয়েভারা। পুরো নাম ‘এর্নেস্তো গেভারা দে লা সের্না। বিশ্ববাসীর কাছে তিনি চে গুয়েভারা বা ‘চে’ নামে পরিচিত। চে’র জš§ ১৯২৮ সালের ১৪ জুন। আর্জেন্টিনার রোসারিও শহরে। তরুণ বয়সে চিকিৎসা বিজ্ঞানে অধ্যয়নকালে তিনি সমগ্র লাতিন আমেরিকা ভ্রমণ করেন। এ ভ্রমণের মাধ্যমে তিনি বুঝতে পারেন ধনী-গরিবের এই ব্যবধানের অবসান ঘটাতে একমাত্র পথ সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব। এই বিশ্বাসেই তিনি রাষ্ট্রপতি জাকোবো আরবেনজ গুজমানের নেতৃত্বাধীন গুয়াতেমালার সামাজিক সংস্কার আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। পরবর্তীকালে মেক্সিকো সিটিতে বসবাসের সময় কিউবার বিপ্লবী রাউল কাস্ত্রো ও ফিদেল কাস্ত্রোর সঙ্গে তার আলাপ হয়। সেই আলাপের সূত্র ধরে চে ফিদেল কাস্ত্রোর ছাব্বিশে জুলাই আন্দোলনে যোগ দেন। কিউবান একনায়ক ফুলগেনসিও বাতিস্তা সরকারকে উৎখাত করার লক্ষ্যে দুই বছর ধরে চলা সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন চে। বিশ্ববিপ্লবে বিশ্বাসী চে গুয়েভারা কিউবায় সফল বিপ্লবের পর নতুন সরকারে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬১ থেকে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত তিনি কিউবার শিল্প বিষয়ক মন্ত্রী ছিলেন। এ সময় তিনি কিউবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন। এ সময় কিউবান নোটগুলোতে তার স্বাক্ষরে শুধু ‘চে’ লেখা থাকত। তিনি বিপ্লবী আদালতে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে অভিযুক্তদের আপিল পুনর্বিবেচনা ও ফায়ারিং স্কোয়াডে মৃত্যুদণ্ড প্রদান, শিল্পোদ্যোগ মন্ত্রী হিসেবে খামার সংস্কার আইন প্রবর্তন ও সামরিক বাহিনীর ইনস্ট্রাকশনাল ডিরেক্টর, কিউবান সমাজতন্ত্রের প্রচারে বিশ্বপর্যটন ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন কিউবার বিপ্লবী সরকারে। তিনি মিলিশিয়া বাহিনীকে প্রশিক্ষণ প্রদানেরও সুযোগ পান। কিউবায় সোভিয়েত পরমাণু ব্যালিস্টিক মিসাইল আনার ক্ষেত্রেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। চে গুয়েভারা ১৯৬৪ সালের ডিসেম্বরে বিশ্বের বিপ্লবীদের কূটনীতিক হিসেবে পরিচিতি পান। তাই তিনি কিউবার প্রতিনিধি হয়ে জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগ দেন। ১৯৬৫ সালে তিনি কিউবা ত্যাগ করে বলিভিয়ায় যান। সেখানে কঙ্গো-কিনসাসায় তার বিপ্লব প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। এরপর তিনি বলিভিয়ায় বিপ্লবে অংশ নেন। সেখানে বলিভিয়ান সেনার হাতে ১৯৬৭ সালের ৭ অক্টোবর তিনি গ্রেপ্তার এবং ৯ অক্টোবর নিহত হন।

কাজী সালমা সুলতানা