স্মরণের আয়োজনে আবেকে নিয়ে শোকাতুর পররাষ্ট্রমন্ত্রী

শেয়ার বিজ ডেস্ক: আততায়ীদের গুলিতে নিহত জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দুই দেশের সম্পর্কোন্নয়নে তার অবদান স্মরণ করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।

২০১৪ সালে আবে’র ঢাকা সফরের কথা উল্লেখ করে মঙ্গলবার তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাপান সফরে যান, জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবেকে বাংলাদেশে আসার দাওয়াত দেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘শিনজো আবে আসেন। তারপর থেকে যে আমাদের সম্পর্ক, একটা কমপ্রিহেনসিভ সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। এর ফলে আমাদের উভয় দেশের লাভ হয়। জাপান আমাদের বহু রকমের সাহায্য করে যাচ্ছে।’ খবর: বিডিনিউজ।

৬৭ বছর বয়সী শিনজো আবে দুই দফায় জাপানের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন, টানা সবচেয়ে বেশি দিন দেশটির সরকার চালানোর রেকর্ডও তার।

স্বাস্থ্যগত কারণ দেখিয়ে ২০২০ সালে প্রধানমন্ত্রিত্ব ছাড়লেও ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টিতে (এলডিপি) তার প্রভাব অটুট ছিল।

তার মৃত্যুর পরদিন শনিবার এক দিনের রাষ্ট্রীয় শোক দিবস পালন করেছে বাংলাদেশ। শোকবার্তা পাঠিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

গতকাল মঙ্গলবার জাপানে আবের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার মধ্যে ঢাকায় দেশটির দূতাবাসেও ছিল প্রভাবশালী সাবেক এ প্রধানমন্ত্রীকে স্মরণের আয়োজন।

দূতাবাসে খোলা শোকবইয়ে বাংলাদেশের জনগণের পক্ষ থেকে স্বাক্ষরের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন।

তিনি বলেন, ‘শিনজা আবে উনি অনেক দিন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। উনার সঙ্গে আমাদের বেশ ভালো ও উষ্ণ সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল। এই উষ্ণ সম্পর্ক আমাদের দেশের জন্য খুব উপকার হয়। আমার দেশের অনেকগুলো মেগা প্রজেক্ট উনি সেগুলো অনুমোদন দিয়েছেন, মানে সাহায্য করেছেন। উনার সময়ে তারা বেশ এগিয়ে এসেছে।’

স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে জাপানের অবদান স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার পরে আমি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চাকরি করতাম। তখন আমাদের বিদেশ থেকে সবকিছু আমদানি করতে হতো। তখন জাপানি কোম্পানিগুলো আমাদেরকে নিঃশর্তভাবে ব্যবসা দিয়েছে। বিভিন্ন রকম জিনিস তাদের কোম্পানিগুলো ও সরকার দিয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার পরে বঙ্গবন্ধু জাপান সফর করলেন, তখন থেকে সব সময় আমাদের বন্ধু। সাহায্য করছেন। সবচেয়ে সুখের বিষয়, জাপান কোনো শর্ত চাপিয়ে দেয় না।’

বৈশ্বিক পরিসরে জাপানের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা বাংলাদেশও করেছে জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, ‘আমরাও জাপানকে সাহায্য করেছি। আমরা ধনী দেশ নই; তাদের নিরাপত্তা পরিষদে জয়লাভের সময় আমরা তাদের সাহায্য করেছি। সেজন্য তারা বিভিন্নভাবে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে আমাদের সাহায্য করেছেন। এগুলো সম্ভব হয়েছিল, তাদের দেশের নেতাদের কারণে, বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের নেতৃত্বের কারণে।’

গত রোববার জাপানের পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষের নির্বাচনের দুদিন আগে শুক্রবার সকালে নারা শহরে দলের প্রার্থীর নির্বাচনী সভায় যোগ দিয়েছিলেন আবে।

বক্তৃতা দেয়ার সময় পেছন থেকে তাকে গুলি করা হয়। কয়েক ঘণ্টা পর চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। যার গুলিতে তিনি নিহত হয়েছেন, সেই বন্দুকধারী একটি ধর্মীয় গোষ্ঠীর ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন। আবে ওই ধর্মীয় গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বলে মনে হওয়াতেই তিনি আবেকে গুলি করেছেন বলে জানিয়েছে স্থানীয় পুলিশ।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের জন্য খুবই কষ্টের এবং এটা খুবই বিয়োগান্তক ঘটনা। একজন নেতাকে গুলি করে মেরে ফেলা, আবার জাপানের মতো দেশে, যারা অত্যন্ত আইন-কানুন মানেÑসেখানে এই ঘটনা ঘটা অবিশ্বাস্য। আমরা খুব মর্মাহত, সারা দেশবাসী মর্মাহত।’